পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরের সাথে ভারতের সীমান্ত সুরক্ষা জোরদারের পাশাপাশি গতকাল (বৃহস্পতিবার, ৮ মে) রাতভর ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীর ও পাঞ্জাব, রাজস্থান আর গুজরাটে জারি করা হয় কারফিউ আর রাত্রিকালীন ব্ল্যাকআউট। চন্ডিগড় ও হরিয়ানার পাঞ্চকুলা, আম্বালা ও সির্সায় বাসিন্দাদের আলো নিভিয়ে ঘরের ভেতরে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। পূর্বসতর্কতা হিসেবে কাশ্মীর উপত্যকাজুড়ে বিচ্ছিন্ন রাখা হয় বিদ্যুৎ সংযোগ।
বিতর্কিত কাশ্মীর ইস্যুকে ঘিরে দুই দশকের সবচেয়ে বড় সামরিক সংকটের মুখে দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরাশক্তি। আখনুর, সাম্বা ও কাঠুয়াসহ জম্মুর বেশ কিছু শহর ও এলাকায় রাতের আকাশ চিরে দেখা যাচ্ছিল ক্ষেপণাস্ত্র আর ছুটন্ত লালচে আলো। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে টানা সাইরেন আর মুহুর্মুহু বোমা বিস্ফোরণের শব্দে প্রকম্পিত হচ্ছিল উপত্যকা।
স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘বোমা আর গুলির শব্দ পেয়েছি। আকাশে ধোঁয়াও দেখেছি। রাস্তাঘাট জনশূন্য হয়ে পড়েছিল। সব গাড়ি বন্ধ করে দেয়া হলো। পুরোপুরি ব্ল্যাকআউট ছিল। এখনও গোলাগুলি আর বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাচ্ছি মাঝে মাঝে।’
সংঘাতের দ্বিতীয় দিনে, রাত প্রায় ১টার দিকে কাশ্মীরের আন্তর্জাতিক সীমান্ত ও জম্মুর মিলিটারি স্টেশন, জয়সলমীরের বিমানঘাঁটি, অমৃতসর, পাঠানকোট, উদামপুরসহ ভারতের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের ১৫টি সামরিক ঘাঁটিতে পাকিস্তান ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় বলে অভিযোগ নয়াদিল্লির। দাবি করা হয়, জম্মুর সাতওয়ারি, সাম্বা, রানবির সিং পুরা ও আর্নিয়া শহরে পাকিস্তানের ছোড়া আটটি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসের। কোনো আর্থিক বা জানমালের ক্ষতি ছাড়াই সব হামলা রুখে দেয়ার দাবি ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের; পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বুধবার শুরু হওয়া ‘অপারেশন সিন্দুর’ চলমান, জানিয়েছে নয়াদিল্লি।
কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা এলাকায় অস্ত্রবিরতি পুরোপুরি ভেঙে পড়ার মধ্যেই, রাতভর পাল্টা হামলার প্রস্তুতি প্রকাশ করে ভারত। যুদ্ধের আবহের মধ্যেই ছড়ায় পাকিস্তানের জেএফ সেভেন্টিন ও এফ সিক্সটিন বোমারু বিমান ভূপাতিত এবং রাজধানী ইসলামাবাদে ভারতের হামলার উড়ো খবর। ক্রুজ মিসাইলের বিকল্প- ইসরাইল নির্মিত হ্যারোপ ও হার্পি কামিকাজি ড্রোন মোতায়েন করে ভারতীয় বিমানবাহিনী। আরব সাগরের উত্তরে রণতরি মোতায়েন করে ভারতীয় নৌবাহিনী। পরিস্থিতির জন্য পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোকে দায়ী করেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
এর আগে রাতভর আতঙ্ক আর উত্তেজনার মধ্যেই ইসলামাবাদ ১৫টি এলাকায় হামলার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে। দাবি করে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কল্পকাহিনী এঁটেছে ভারত এবং পাকিস্তানের ভাবমূর্তি নষ্টে বেপরোয়া মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে।
দু’দিনের সংঘাতে সীমান্তের দু’পাশে প্রাণ গেছে অর্ধশত মানুষের। শুক্রবার ভোরের আলো ফুটতে থাকার মধ্যেই ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরতে শুরু করে জম্মু-কাশ্মীরে।





