গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসনে নতুন করে শুরু হয়েছে মৃত্যুর মিছিল

গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসনে নতুন করে শুরু হয়েছে মৃত্যুর মিছিল | ekhon tv
0

মাত্র দুই মাসের বিরতি দিয়ে পবিত্র রমজানেই গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের আগ্রাসনে হতবাক উপত্যকার সাধারণ মানুষ। নতুন করে শুরু হয়েছে মৃত্যুর মিছিল। বিমান হামলায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয় নেয়া তাঁবুগুলো নিমিষে ছাই হয়ে গেছে। স্বজনরা হাসপাতালে ঘুরছেন আহত কিংবা মৃত পরিবারের সদস্যের খোঁজে। গাজাবাসী বলছে, ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে উন্মাদ হয়ে গেছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী।

যুদ্ধবিরতির মাঝেই এসেছিল পবিত্র রমজান। ঈদ ঘিরে আনন্দ ছিল স্বজনহারা বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের মাঝে। কিন্তু সেই আমেজ উবে গেছে কর্পূরের মতো। দ্বিতীয় দফায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর নিয়ে ইসরাইল গড়িমসি করলেও গাজাবাসীর মনে ছিল বিশ্বাস, অন্তত পবিত্র রমজান মাসটা আইডিএফ'এর বর্বর হামলা থেকে মুক্ত থাকবে এই ভূখণ্ড।

সেই আশায় প্রতিদিনের মতো ত্রাণ থেকে পাওয়া খাবার দিয়ে সেহরি প্রস্তুত করছিলো গাজাবাসী। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। অতর্কিত বিমান হামলায় মুহূর্তে সব শেষ।

গাজা অধিবাসীদের একজন বলেন, ‘আমরা সেহরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ রকেট হামলা হলো। চোখের সামনে দেখলাম কয়েকজন মরে গেলো, অ্যাম্বুলেন্স আসলো। এখন ধ্বংসস্তূপে প্রতিবেশীদের খুঁজছি।’

আরেকজন বলেন, ‘ঘুমাচ্ছিলাম। শব্দ পেয়ে দেখি পাশের বাড়িতে হামলা হয়েছে। গিয়ে দেখি পরিবারের সবাই ধ্বংসস্তূপের মাঝে চাপা পড়েছে। ভেবেছিলাম বাচ্চাটা মারা গেছে, কিন্তু সবাইকে উদ্ধার করতে পেরেছি।’

টানা দেড় বছর ধরে চলা আগ্রাসনে ঘরবাড়ি হারিয়ে রাস্তায় আশ্রয় নেয়া মানুষগুলোর জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছিল তাঁবু। খান ইউনিসের সেই তাবুগুলো ইসরাইলের বিমান হামলায় ছাই হয়ে গেছে। পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে দিশেহারা সবাই।

এরকমই এক পরিবারের একজন সদস্য বলেন, ‘বিকট শব্দে ঘুম ভাঙে। তাঁবু থেকে বের হয়ে দেখি, হামলা হয়েছে। আরও হামলা হচ্ছে। দৌড়াতে গিয়ে দেখি আরেকটা মিসাইল হামলা হলো, তাবুতে আগুন লাগলো, বাচ্চাদের চিৎকার শুনে দৌড়ে গেলাম উদ্ধার করতে।’

একরাতের হামলায় গাজায় শত শত মানুষের মৃত্যুর ঘটনা আগ্রাসন শুরুর পর এবারই প্রথম। হাসপাতালগুলোর অবস্থা মানবেতর। কেউ খুঁজছেন আহত স্বজনকে, কেউবা প্রাণ হারানো প্রিয়জনকে। চোখের সামনে এই বীভৎস হামলা দেখে বাকরুদ্ধ ফিলিস্তিনিরা।

একজন ফিলিস্তিনি বলেন, ‘আমি রেড জোনে থাকি। এখানে ইসরাইল আরও বেশি হামলা করে। যুদ্ধবিরতি কোথায়? শতাধিক মানুষ শহীদ হয়ে গেলো। এটা মানা যায় না। সব খানে হামলা হচ্ছে।’

পবিত্র রমজান মাসে ভয়াবহ এই হামলা আর গণহত্যার ঘটনায় ইসরাইলের সাহস পাওয়ার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রকেই দুষছে গাজার সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র আর ইসরাইলের জন্য গাজা টেস্টিং গ্রাউন্ডে পরিণত হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, গদি টিকিয়ে রাখতে উন্মাদ হয়ে গেছেন নেতানিয়াহু।

একজন বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছেন নেতানিয়াহু। তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থাকতে চাইলেও জানেন, তিনি ব্যর্থ। সমর্থন পেতেই আবারও যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছেন। আমার মনে হয় রাজনীতির কিছুই তিনি বোঝেন না।’

২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় আগ্রাসন শুরু করে ইসরাইল। ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ নেয়ার আগমুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রসহ আরব বিশ্বের কয়েকটি দেশের মধ্যস্থতায় ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও দ্বিতীয় দফায় আর যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়েনি। হামাস-ইসরাইল কোন পক্ষই চূড়ান্ত চুক্তিতে না আসার পর মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে গাজায় পুরোদমে আগ্রাসন শুরু করেছে ইসরাইল।

এসএইচ