অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় এখনও বন্দি ৫৯ জন ইসরাইলি জিম্মি। স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধের শর্তে তাদের সবার মুক্তি নিশ্চিতে অস্ত্রবিরতির চুক্তির দ্বিতীয় দফার আলোচনা হওয়ার কথা ছিল এক মাসের বেশি সময় আগে। স্বেচ্ছায় যে আলোচনা থেকে সেসময় সরে দাঁড়ায় ইসরাইল।
গাজা উপত্যকায় ফের আগ্রাসী আক্রমণ শুরু এবং মাত্র কয়েক ঘণ্টায় ৩শ'র বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যার কারণ হিসেবে জিম্মিদের ফিরিয়ে না দেয়ার কথা উল্লেখ করেছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী।
অথচ চুক্তি এগিয়ে নিতে করণীয় নির্ধারণের লক্ষ্যে কায়রো বা দোহায় মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে বৈঠকে প্রতিনিধি পাঠাতেই চাননি যুদ্ধবাজ নেতা। অন্যদিকে, যুদ্ধে ইতি টানার লক্ষ্যে বাকি সব বন্দিকে মুক্তি দিতে রাজি বলে জানিয়েছে হামাস।
যুক্তরাষ্ট্রের আরব সেন্টার নির্বাহী পরিচালক খলিল জাহশান বলেন, ‘অনেক কারণেই এ চুক্তি টেকসই ছিল না। বারবার ইসরাইলিদের বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘন আর অব্যাহত অনুপ্রবেশের অভিযোগ তো হামাস করেছেই। যুদ্ধ বিধ্বস্ত এলাকায় জরুরি ত্রাণ ঢুকতে পারছে না। ধ্বংসস্তূপ সরানোর ভারী সরঞ্জাম যেতে দেয়া হচ্ছে না। অন্যদিকে ইসরাইল বলছে যে হামাস চুক্তির পুঙ্খানুপুঙ্খ শর্ত মানছে না। গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতিও কোনো কাজে দেয়নি।’
পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের চাপে প্রতিনিধি পাঠালেও নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তারা জানান, ইসরাইল ও হামাসের মতপার্থক্যের ব্যবধান এতোই বেশি যে তাতে সেতুবন্ধনের কোনো সহজ পথ খুঁজে পাননি মধ্যস্থতাকারীরা। ইসরাইলের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আবারও হামলা শুরু করে বন্দিদের ফেরাতে পারবেন বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সে বিশ্বাস নেই খোদ ইসরাইলিদেরও।
ইসরাইল রাজনৈতিক বিশ্লেষক ওরি গোল্ডবার্গ বলেন, ‘নেতানিয়াহু আর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে ইসরাইলের জাতীয় পুলিশ বিভাগ ও শিন বেত। নতুন অনুসন্ধানের পরিপ্রেক্ষিতে নেতানিয়াহুবিরোধী বিক্ষোভেও নতুন করে হাওয়া লেগেছে। গাজা ফেরত জিম্মিদের সাক্ষ্যে এটা স্পষ্ট যে, সেখানে এখনও যারা বন্দি তারা শারীরিকভাবে ভীষণ নিস্তেজ হয়ে পড়েছেন। অর্থাৎ এই নতুন করে বোমা হামলার মাধ্যমে চাপ দিয়ে বন্দিদের মুক্ত করার যে কৌশল, তা ইসরাইলিরা আর বিশ্বাস করছেন না।’
ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেতের প্রধানকে বরখাস্ত করতে চাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন সংস্থাটি দেড় শতাধিক সাবেক কর্মকর্তা।
এদিকে গাজায় নতুন করে সংঘাতের কারণে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ স্থগিত হয়েছে। ঘুষ, প্রতারণাসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী কি স্রেফ সিংহাসন বাঁচাতেই ফের যুদ্ধ উসকে দিলেন?