গেল ১৩ নভেম্বর জেল থেকেই দেশব্যাপী আন্দোলনের চূড়ান্ত ডাক দিয়েছিলেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। সে ডাকে সাড়া দিয়ে রাজধানীর পথে লাখ লাখ মানুষ।
আদালতের নির্দেশ অমান্য করে খাইবার পখতুনখোয়ার প্রাদেশিক রাজধানী পেশওয়ার ও বান্নু শহর, পাঞ্জাবের প্রাদেশিক রাজধানী লাহোর ও মুলতানসহ দেশের বিভিন্ন শহর থেকে রাজধানী ইসলামাবাদের উদ্দেশ্যে রোববার সকালেই যাত্রা শুরু করে ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ- তথা পিটিআই কর্মীদের বিশাল গাড়িবহর।
ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে এরই মধ্যে বিক্ষোভে অচল হয়ে পড়েছে পাকিস্তানের দ্বিতীয় বৃহৎ শহর লাহোরের জনজীবন। একের পর এক কঠোর ব্যবস্থা নিয়েও বিক্ষোভ ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন। পাঞ্জাবের সঙ্গে খাইবার পখতুনখোয়া, সিন্ধু ও বেলুচিস্তান- তিনটি প্রদেশের সীমান্ত পুরোপুরি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। ইসলামাবাদে ১৪৪ ধারা লঙ্ঘনে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে প্রশাসন। নিরাপত্তা বাহিনীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে চলছে ইসলামাবাদের দিকে যাত্রা। এ অবস্থায় রাজধানীর কূটনৈতিক এলাকায় জারি করা হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা।
'ডু অর ডাই' শীর্ষক এ কর্মসূচি দমনে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বিক্ষোভ ঠেকাতে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে বিশাল বিশাল শিপিং কনটেইনার ফেলে রাস্তা আটকে দিয়েছে প্রশাসন। বিক্ষোভে অংশ নেয়ায় শুধু মুলতান শহরেই আটক করা হয়েছে ৩শর বেশি পিটিআইকর্মীকে।
ইসলামাবাদ-রাওয়ালপিন্ডিতে মোবাইল ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন; পেশোয়ারে ইন্টারনেট সংযোগ আংশিক বিচ্ছিন্ন; বাহাওয়ালপুর, কামালিয়া, তোবা তেক সিং ও হাফিজাবাদ এলাকায় মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন, দেরা ইসমাইল খান, গুজরানওয়ালা, রাজনপুর ও আশপাশের এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন। নিরাপত্তায় গুরুতর হুমকি হিসেবে বিবেচিত এলাকাগুলোতে ইন্টারনেটা বা মোবাইল ফোন সংযোগ কিংবা দুটোই বন্ধ রাখা হয়েছে এবং দেশের বাকি সব অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা অক্ষত বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ইসলামাবাদে বিক্ষোভকারীরা যেন ঢুকতেই না পারে, সে লক্ষ্যে গেলো কদিনে অতিরিক্ত পুলিশ ভ্যান পাঠানো, বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তারের পর কোথায় রাখা হবে- ইত্যাদি সব সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছে পাকিস্তান সরকার। ২০২৩ সালে ইমরানকে গ্রেপ্তারের পর থেকে বারবার রাজধানীতে বিক্ষোভ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে পিটিআই সমর্থকরা। আন্দোলনের কারণে বিগত দেড় বছরে পাকিস্তান সরকারকে স্থানীয় মুদ্রায় ২শ কোটি রুপির বেশি ক্ষতি গুণতে হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম ডন।
রোববারের পূর্বঘোষিত আন্দোলন ঠেকাতে দুই মাসের জন্য রাজধানীতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয় সম্প্রতি। ইসলামাবাদ নিরাপত্তা বাহিনীর আট হাজার অতিরিক্ত সদস্য এবং অদূরে পাঞ্জাব প্রদেশেও তিনদিনের জন্য ১৪৪ ধারা জারি ও প্রায় ১১ হাজার নিরাপত্তা কর্মকর্তা মোতায়েন রয়েছে। সিন্ধু প্রদেশের করাচীতে বাতিল করা হয়েছে সকল পুলিশ সদস্যের ছুটির আবেদন।
এদিকে ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফ্লোরিডার বাসভবনের সামনে শনিবার বিক্ষোভ করেন কয়েকশ পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক।