হঠাৎ দেখে ভাসমান হিমবাহ বলে মনে হলেও আসলে এটি ঘন, পুরু ফেনার আস্তর, যার নিচে চাপা পড়েছে আস্ত নদী। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ভীষণ শ্রদ্ধাও যমুনাকে বাঁচাতে পারেনি দূষণ থেকে।
যমুনার বিশাল এই অংশটিকে রোববার (২০ অক্টোবর) সম্পূর্ণ মৃত নদী ঘোষণা করেন ভারতীয় পরিবেশবিদরা। দূষণে পানি বিষাক্ত হতে হতে উর্বরতা হারিয়েছে নদীসংলগ্ন এলাকা, মুছে গেছে জলজ প্রাণের অস্তিত। সেই বিষই যেন উগড়ে দিয়েছে যমুনা। কালো জল বলে নদীর বুকে সাদা ফেনার স্তূপ যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় দূষণের ভয়াবহতা।
স্বচ্ছ ভারত পরিবেশবিদ ও নির্বাহী পরিচালক বিমলেন্দু ঝা বলেন, 'ফেনা অনেক বেশি দেখা যায় কয়েকটা দিন। কিন্তু সবসময়ই ফেনা থাকে। ভরা বর্ষা বাদে বছরের বাকি সময় যমুনার পানি কালো রঙের। তাই দূষণ বেড়ে গেলে তা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। যেমনটা গত ক'দিনে হয়েছে। কিন্তু আসলে নদীটি মৃত এবং তা বছরজুড়েই।'
বছরের পর বছর ধরে প্রতিদিন গড়ে ৩৬০ লিটার বর্জ্য ফেলা হয় নদীতে। পরিশোধন ছাড়াই শিল্পকারখানার রাসায়নিক বর্জ্য, গৃহস্থালি বর্জ্য- সব ফেলা হয়। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির পুরো পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা শেষ হয় যমুনায় এসে। নেই নদী পরিষ্কার করার কোনো উদ্যোগ। যমুনার তীরেই শ্মশানে সৎকার করা হয় হাজার হাজার মরদেহ। সব মিলিয়েই সীমা ছাড়িয়েছে দূষণের মাত্রা।
বিমলেন্দু ঝা আরও বলেন, 'যমুনায় দূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী দিল্লির নিজস্ব দূষণ। শহরের ১৭টি ড্রেন যমুনায় গিয়ে খালি হয়। ফেনা দেখলেই এটা পরিষ্কার বোঝা যায় কী ধরনের রাসায়নিক পানিতে পড়ছে।'
কয়েক দশক ধরে যমুনায় দূষণের চিত্র হয়ে উঠেছে ভারতের পরিবেশে ভয়াবহ সংকটের চাক্ষুষ প্রমাণ। দূষণের কারণে নদীনির্ভর কয়েক কোটি মানুষের জীবন বিপন্ন হলেও সংকট সমাধানে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবকে দায়ী করছেন পরিবেশবিদরা।