এশিয়া
বিদেশে এখন
0

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় প্রতিশোধের হুমকি ইসরাইলের

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার শক্তিশালী প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছে ইসরাইল। যদিও পাল্টা আঘাত এলে কয়েকগুণ বেশি শক্তি নিয়ে তা ফিরিয়ে দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে তেহরান। এদিকে হামলার সমুচিত জবাব দেয়ায় ইরান সরকারের প্রশংসায় ইরাক, ফিলিস্তিন, লেবাননসহ বিভিন্ন দেশের বাসিন্দারা।

কয়েক দশকের একতরফা আগ্রাসনে মরিয়া বলেই হয়তো যুদ্ধের দামামার মধ্যেও ইসরাইলে ইরানের হামলার খবরে মধ্যরাতে এমন উচ্ছ্বাস ইরান-ইরাকসহ বিভিন্ন দেশের বাসিন্দাদের। ফিলিস্তিন, লেবানন, ইরান আর হিজবুল্লাহ'র পতাকা উড়িয়ে, মিষ্টি বিলিয়ে উদযাপন চলে শহরে শহরে।

বাসিন্দাদের মধ্যে একজন জানান, প্রতিশোধ নিতে পেরেছি বলে আমি খুশি, আরও আগেই দরকার ছিল। মূল শত্রু নেতানিয়াহুকে আঘাত করতে পারলে, জলাতঙ্কে আক্রান্ত কুকুরটাকে হত্যা করতে পারলে সবচেয়ে বেশি খুশি হবো।

আরও একজন বাসিন্দা জানান, কত দীর্ঘ সময় যে অপেক্ষা করেছি, কতো রাত পার করেছি এই সময়টা দেখার আশায়! ইসরাইল পাল্টা হামলা চালালেও দুঃখ পাবো না। জীবন নিয়ে রুখে দাঁড়াবো

চোখের দেখায় এ যেন রাতের অন্ধকার চিরে ছুটে যাওয়া আতশবাজি। কিন্তু পরমুহূর্তেই যখন বিস্ফোরণে কেঁপে উঠছিল চারপাশ, যুদ্ধের সতর্কতামূলক সাইরেনের আওয়াজে লুকাতে ব্যস্ত সারা দেশের মানুষ- তখনই স্পষ্ট হয়ে ওঠে আতশবাজি নয়, শত শত ক্ষেপণাস্ত্র দখল করে নিয়েছে ইসরাইলের আকাশ।

মঙ্গলবার মধ্যরাতে ইসরাইলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে ১৮০টির বেশি ব্যালিস্টিক মিসাইল ছোঁড়ে ইরান। বলা হচ্ছে, ইসরাইলে এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় সামরিক হামলা এটি। এজন্য ইরানকে চড়া মাশুল গুণতে হবে বলেও সতর্ক করেছে তেলআবিব।

ইসরাইল সেনাবাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেন, 'প্রতিরক্ষা আর পাল্টা আক্রমণ চালাতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি আমাদের আছে। সঠিক জায়গায় সঠিক সময়ে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটবে।'

ইসরাইল প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, 'বড় ভুল করেছে ইরান। এর জন্য চড়া মাশুল গুণতে হবে। আত্মরক্ষা এবং শত্রুপক্ষকে জবাব দেয়ার লক্ষ্যে আমাদের দৃঢ়তা এখনও বুঝতে পারেনি দেশটি। তবে বুঝবে। লক্ষ্যে অবিচল থাকবো আমরা। যে আঘাত করবে, তাকে পাল্টা আঘাত করবো।'

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বছরব্যাপী সর্বাত্মক সামরিক অভিযান চলতে থাকার মধ্যেই লেবাননেও গত দু'সপ্তাহ ধরে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। চালিয়েছে একের পর এক গুপ্ত হামলা, হত্যা করেছে ইরান সমর্থিত সশস্ত্র রাজনৈতিক সংগঠন হিজবুল্লাহ'র প্রধানসহ বেশ ক'জন শীর্ষ নেতাকে। এর প্রতিশোধ নিতেই মঙ্গলবারের হামলা, পাল্টা আঘাত এলে কয়েক গুণ শক্তিতে তাও ফিরিয়ে দেয়ার হুমকি বলে তেহরানের।

ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি বলেন, 'ইহুদি দখলদারদের উন্মাদনা যদি যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, অপরাধের পর অপরাধ করতে থাকে, আমাদের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতায় আঘাত বন্ধ না করে, তাহলে এই অভিযানের পুনরাবৃত্তি ঘটবে আরও কয়েক গুণ শক্তিতে। হামলা হবে তাদের সব অবকাঠামোতে।'

হামলায় ধ্বংসযজ্ঞ। ছবি: এখন টিভি

এবারই প্রথম কোনো হামলায় হাইপারসনিক ফাত্তাহ মিসাইল ব্যবহার করেছে ইরান। দেশটির অভিজাত সশস্ত্র বাহিনী রিভল্যুশনারি গার্ডসের দাবি, ৯০ শতাংশ ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যে আঘাত করেছে। হামলায় ইসরাইলে ধ্বংসযজ্ঞও লক্ষণীয়। যদিও ইরানের ছোঁড়া অনেক ক্ষেপণাস্ত্র আকাশেই ধ্বংসের দাবি করেছে ইসরাইল ও দেশটির ঘনিষ্ঠতম মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন মার্কিন নৌবাহিনীর দু'টো ডেস্ট্রয়ার থেকে গুলি করে ইরানের ১০টির মতো ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করা হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন।

যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস বলেন, 'দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে এ হামলার নিন্দা জানাচ্ছি আমি। স্পষ্ট চোখে দেখছি। মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করে তোলা বিপজ্জনক একটি শক্তি ইরান।'

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের বছর পূর্ণ হতে বাকি মাত্র তিনদিন। দীর্ঘ এ সময়ে ৪১ হাজার ৬শ'র বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে নেতানিয়াহু প্রশাসন। লেবাননেও গেলো ১০ দিনের অভিযানে নিহত আরও হাজারের বেশি। পশ্চিম তীরসহ সবখানেই দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। এসব ঘটনাকেই ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার নাম দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতার জন্য ইরানকে দায়ী করছে মার্কিন প্রশাসন।

এফশি

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর