তাইওয়ানের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান হুয়ালিয়েনের তারোকো গর্জের প্রবেশদ্বার এটি। বুধবারের (৩ এপ্রিল) ৭.৪ মাত্রার ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে এখানে। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল এই শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দক্ষিণে, যার গভীরতা ছিল ৩৫ কিলোমিটার।
ভূমিকম্পের পর অন্তত ৫৮টি আফটারশক অনুভূত হয়। ধসে পড়ে ২৬টির বেশি বহুতল ভবন। যার মধ্যে অর্ধেকের বেশি হুয়ালিয়েন শহরের। হেলে পড়ে ভবনগুলো বড় পাথর, ক্রেন ও নানা সরঞ্জাম দিয়ে ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে। যেগুলো যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে।
শহরের বাসিন্দারা আতঙ্কে সারা রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন। অনেকের রাত কাটে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে ৮৭ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি।
স্থানীয় একজন বলেন, 'ভূমিকম্পের পর আফটারশক নিয়ে আমরা ভয়ে ছিলাম। এই অবস্থা আমাদের ধারণার বাইরে ছিল। আমার বাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। সকালের নাশতা করতে ভবনের বেইজমেন্টে যাওয়ার পর দেখলাম পুরো বাড়ি কাঁপছে। তখন দৌঁড়ে বাইরে বেরিয়ে আসি।'
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, পর্যটনসহ বেশকিছু জনবহুল এলাকায় আঘাত হানে ভূমিকম্প। আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে হাজারের বেশি মানুষকে। নিহতদের মধ্যে কানাডা, যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকজন বিদেশি নাগরিকও আছেন। এছাড়া, টানেল ধসে আটকা পড়েছেন ৭০ জনের বেশি মানুষ। উদ্ধারকাজ শেষ করতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে।
হুয়ালিয়েন শহরের মেয়র হু চেন-ওয়েই বলেন, 'ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো থেকে সব বাসিন্দা এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এখন ধ্বংসস্তূপে কেউ আটকে আছে কি না এবং কোনো মরদেহ আছে কি না তা সন্ধানে কাজ করছে উদ্ধারকারী দল।
এছাড়া, ঘুরতে এসে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় আটকা পড়েছেন অনেক বিদেশি পর্যটক। হাইকিং করার সময় প্রাণ হারান ৩ জন। এছাড়া, ভূমিকম্পে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মৃত্যু হয় আরও এক ট্রাকচালকের। এখনও নিখোঁজ আছেন ৫০ জনের বেশি মানুষ।
ভূমিকম্পে খুব একটা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি তাইওয়ানের চিপ তৈরির সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির। কর্মীদের দ্রুত নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়। কোম্পানিটি অ্যাপলসহ মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানিকে সেমিকন্ডাক্টর সরবরাহ করে।
তাইওয়ান দ্বীপে এর আগে সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটেছিল ১৯৯৯ সালে। ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রায় আড়াই হাজার মানুষের মৃত্যু হয় এবং ধসে পড়ে ৫ হাজারের বেশি ভবন। ২৫ বছর পর আবারও ভূমিকম্পের ভয়াবহতা দেখলো তাইওয়ানবাসী।