আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তানে আবারও নাটকীয়তা চলছে। নির্বাচনের আগে ধারণা ছিল ইমরান খানের কারাবন্দিতে ব্যাপক ভরাডুবি ঘটবে তার দল তেহরিক-ই-ইনসাফের। অথচ ভোট গণনায় সবার থেকে এগিয়ে পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই।
আসন সংখ্যার দিক থেকে শীর্ষে থাকলেও পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্রদের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। অন্যদিকে সরকার গঠনের জন্য সম্মিলিতভাবে প্রয়োজনীয় ১৩৪টি আসন নেই নওয়াজ শরীফের মুসলিম লীগ ও বিলাওয়াল ভুট্টোর পিপিপির কাছেও। তাই পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়।
নির্বাচন কমিশনের অস্বাভাবিক ধীরগতির ফল ঘোষণার মধ্যেই লাহোরে নিজ দলকে বিজয়ী হিসেবে দাবি করেন মুসলিম লীগ প্রধান নওয়াজ শরীফ। জানান, অন্য দলের সঙ্গে বসে সরকার গঠনে প্রস্তুত তিনি। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন জানিয়েছে, বিজয় ভাষণের পরেই বৈঠক করেছেন পিপিপি ও মুসলিম লীগ প্রধান।
পাকিস্তান মুসলিম লীগের প্রধান নওয়াজ শরীফ বলেন, 'নির্বাচনের ফলে মুসলিম লীগ পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় দলে পরিণত হয়েছে। দেশকে ক্রান্তিকাল থেকে বের করে আনা আমাদের দায়িত্ব। ম্যান্ডেট পাবার পর এখন আমাদের কাজ অন্য দলগুলোর সঙ্গে বসে সরকার গঠন করা।'
২০২২ সালে অনাস্থা ভোটে ইমরান খানের পতনের পর জোট সরকার গঠন করে মুসলিম লীগ ও পিপিপি। সেসময় শাহবাজ শরীফ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন বিলাওয়াল ভুট্টো। অতীতের সম্পর্ককে মাথায় রাখলে এবারও দুই দলের জোট সরকার গঠনের সম্ভাবনা থেকেই যায়।
তবে বিলাওয়াল ভুট্টোকে প্রধানমন্ত্রীত্ব না দেয়া হলে মুসলিম লীগের সঙ্গে পিপিপি'র হাত মেলানোর সম্ভাবনা নেই বলে দাবি করছেন দলটির শীর্ষ নেতা খুরশীদ শাহের। অন্যদিকে কারাবন্দি হলেও এআই জেনারেটেড ভাষণে দুই-তৃতীয়াংশ আসন জয়ের দাবি করা হয় ইমরান খানের ভেরিফাইড এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে। পিটিআই এর অন্তবর্তীকালীন প্রধান গহর আলী খান জানান, মুসলিম লীগ কিংবা পিপিপির সঙ্গে জোট গঠন করবে না দল সমর্থিত প্রার্থীরা।
পাকিস্তানের সংবিধান অনুসারে ফল ঘোষণার ৩ দিনের মধ্যে স্বতন্ত্রদের সমর্থন জানাতে হবে পছন্দের দলকে। তবে এক্ষেত্রে জটিলতার মুখে পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীরা। কারণ তেহরিক-ই-ইনসাফকে নিষিদ্ধ করায় আপাতত পার্লামেন্টে দলটির কোনো অস্তিত্ব নেই। এক্ষেত্রে স্বতন্ত্ররা কোনো দলকে সমর্থন না জানালে সংরক্ষিত আসনে প্রার্থীও দেয়ার সুযোগও হারাবে দলটি।
তবে পাকিস্তানের রাজনীতিতে প্রায় ৪০ বছর আগে এসেছিল এমনই এক পরিস্থিতি। ১৯৮৫ সালে জেনারেল জিয়াউল হকের শাসনামলে নির্বাচন হয়েছিল দলবিহীন। সে সময় স্বতন্ত্র সদস্যরা মিলে পার্লামেন্টের মধ্যে তৈরি করে নতুন একটি দল। নাম দেয়া হয় ছাত্তা লীগ, যা আজ মুসলিম লীগ নামে পরিচিত।
পাকিস্তানের সাংবাদিক সাহজেব জিলানীর মতে, মুসলিম লীগ স্বতন্ত্রদের প্রভাবিত না করতে পারলে মজলিস ওয়াহদাত ই মুসলিমিন (মউমু)-র সাথে জোট গঠন করতে পারে পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্ররা। পার্লামেন্টে দলটির হাতেগোনা কয়েকটি আসন থাকলেও প্রাদেশিক নির্বাচনে দল দুটির জোট গঠনের ইতিহাস আছে। মউমু'র সাথে জোট গঠনে স্বতন্ত্ররা দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারবে, সঙ্গে দখলে রাখতে পারবে সংরক্ষিত আসনগুলোও।