জনপ্রিয় নেতা ইমরান খানকে বাদ দিয়েই পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচনের ফলাফলে বড় ভূমিকা রাখবে ১৪১ আসন নিয়ে গঠিত পাঞ্জাব প্রদেশ। নতুন সরকার গঠনে কমপক্ষে ১৩৪টি আসনে বিজয়ী হতে হবে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেই পাকিস্তানের ১৬তম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচন ঘিরে সহিংসতায় কয়েকদিনে প্রায় অর্ধশত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এবারের নির্বাচনে আলোচনার কেন্দ্রে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। একের পর এক মামলায় ইমরানসহ তার দলের শতাধিক নেতাকর্মী এখন কারাবন্দি। দলীয় ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না ইমরানের দল- পিটিআই।
এবারের নির্বাচনে মূল খেলোয়াড় পাঞ্জাবের সিংহ নামে পরিচিত নওয়াজ শরীফের দল মুসলিম লিগ-নওয়াজ। চতুর্থবারের মতো সরকার গঠনে মরিয়া দলটি। এরপরই ক্রিকেট মাঠ থেকে রাজনীতির মাঠে আসা পাকিস্তানের জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ইমরান খান। দুর্নীতির দায়ে কারাবন্দি হয়ে নির্বাচনে অযোগ্য হয়েছেন তিনি। নিজের জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে জেলে থেকেও নির্বাচনে প্রভাব রাখছেন ক্যারিশমাটিক ইমরান খান।
অন্যদিকে রাজনীতিতে তরুণ মুখ পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান ৩৫ বছর বয়সী এই নেতা। দক্ষিণাঞ্চলের সিন্ধু প্রদেশে তার দলের বড় প্রভাব আছে।
সম্প্রতি গ্যালাপ পাকিস্তানের এক জরিপে দেখা যায়, ৬১ শতাংশ সমর্থন নিয়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে আছেন ইমরান খান। অন্যদিকে তার প্রতিপক্ষ নওয়াজ শরীফের সমর্থন ৩৬ শতাংশ। এবারের নির্বাচনে বিপুলসংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থীও আছেন। যাদের বেশিরভাগই তরুণ, ইমরানের দলের ২৩৬ জন প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে লড়ছেন।
জাতীয় আইনসভার ২৬৬টি আসন ও ৭০টি সংরক্ষিত আসন নিয়ে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ গঠিত। জাতীয় ও প্রাদেশিক আইনসভার জন্য দুটি করে ভোট দেবেন ভোটাররা। পাঞ্জাব প্রদেশে সবচেয়ে বেশি ১৪১টি আসন আছে। মূলত এই প্রদেশের ফলাফলের ওপরই সরকার গঠন অনেকাংশে নির্ভর করে। সংরক্ষিত আসনের মধ্যে ৬০টি আসন নারীদের জন্য এবং ১০টি অমুসলিম বা সংখ্যালঘুদের জন্য বরাদ্দ।
জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়ে দেশটির সরকার গঠন করতে কমপক্ষে ১৩৪টি আসন দরকার। নির্বাচনের পর স্বতন্ত্র প্রার্থীদের যেকোন দলে যোগ দেয়ার সুযোগ আছে। এরপর ৩৩৬ সংসদ সদস্যদের ভোটে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এবার পাকিস্তানে কোন একক দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। সরকার গঠনে ভরসা করতে হবে জোটের ওপর। যদিও জোট গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তেমন কোন পরিকল্পনা দেখা যায়নি।
পাকিস্তানের নির্বাচন শুধু দল বা তাদের নেতাদের জনপ্রিয়তা মাপার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়। অর্থনৈতিক সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো ইস্যুগুলোও নির্বাচনে প্রভাব রাখছে। গত ৫৩ বছরে দেশটিতে অনুষ্ঠিত ১১টি সাধারণ নির্বাচনের ৬টিতে গড় ভোটার উপস্থিতি ছিল মাত্র ৪৫ শতাংশ। বাকি ৫টি নির্বাচনে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে।