ভেনেজুয়েলার আয়ের প্রধান উৎস জ্বালানি তেল। মার্কিন জ্বালানিবিষয়ক সংস্থা ইআইএয়ের তথ্য মতে, ভেনেজুয়েলার কাছে এখনো ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেলের অপরিশোধিত তেলের ভাণ্ডার রয়েছে। যা ইরাকের চেয়েও বেশি। এটি বিশ্বে সংরক্ষিত মোট তেলের ৫ ভাগের ১ ভাগ। যদিও দেশটির সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এবং অর্থনৈতিক সংকট থাকায় খুবই কম পরিমাণ প্রতিদিন গড়ে মাত্র ১০ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন করতে পারে। যা বিশ্বের মোট উত্তোলনের মাত্র শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ। ২০১৩ সালে মাদুরো ক্ষমতা নেয়ার পর তেল উত্তোলন অর্ধেকে নেমে আসে।
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরো অভিযোগ করে আসছেন, তার দেশের বিপুল জ্বালানি তেলের ভাণ্ডার দখলে নিতে মরিয়া ওয়াশিংটন। মাদকবিরোধী অভিযানের নামে সেই লক্ষ্যেই যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ তার। এমনকি তাকে উৎখাত করে ভেনেজুয়েলার তেল বাণিজ্যে নিজেদের করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
এবার মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকা জ্বালানি তেলের ট্যাংকারগুলো ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও বের হওয়া আটকাতে সর্বাত্মক অবরোধের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাম্প। এছাড়া, দেশটির শাসকগোষ্ঠীকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবেও চিহ্নিত করেন তিনি। ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ চুরি, মাদক ও মানবপাচারসহ বহু কারণে ভেনেজুয়েলার ওপর অবরোধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে তা বাস্তবায়নের বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বার্তা দেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
আরও পড়ুন:
ট্রাম্পের অবরোধের নির্দেশকে উদ্ভট হুমকি বলে এরইমধ্যে তা প্রত্যাখ্যান করছে ভেনেজুয়েলা সরকার। শান্তির পথ বেছে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। মাতৃভূমি রক্ষায় যেকোনো পদক্ষেপ নিতে পিছু পা হবে না বলেও জানান তিনি।
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো বলেন, ‘ভেনেজুয়েলাকে উপনিবেশ স্থাপন করে খনিজ সম্পদ-তেল, গ্যাস,স্বর্ণ, লোহা, অ্যালোমিনিয়াম এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থ কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন জগণের কাছে আমরা হাজারবার বলেছি তেলের বিনিময়ে রক্ত এবং যুদ্ধ চায় না ভেনেজুয়েলা।’
এদিকে, ক্যারিবীয় অঞ্চলের পুয়ের্তো রিকোর ঘাঁটিতে সেনা, যুদ্ধ বিমান, কোস্ট গার্ড হেলিকপ্টারের পর সামরিক জাহাজ নোঙর করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যা ভেনেজুয়েলার সঙ্গে চলমান উত্তেজনাকে আরও উস্কে দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, দেশটিতে স্থল অভিযানের হুমকিও দিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প।
এদিকে, শাসনক্ষমতা থেকে মাদুরোকে অপসারণে যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন জানানোর আশ্বাস দিয়েছে চিলি। এ সময় চিলির প্রেসিডেন্ট বলেন, মাদক ও স্বৈরশাসনের পতনে যেকোনো পদক্ষেপে পাশে আছেন তিনি।
চিলির প্রেসিডেন্ট হোসে আন্তোনিও কাস্ত বলেন, ‘ভেনেজুয়েলার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শাসন ব্যবস্থা ও নিয়মকানুন স্পষ্ট। সেখানে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন হয়েছিলো এবং মাদুরো তা চুরি করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে এ অবৈধ প্রেসিডেন্টের গণতান্ত্রিক বৈধতা নেই। এর জন্য শিগগিরই একটি আন্তর্জাতিক চুক্তির প্রয়োজন। কারচুপি নির্বাচন বাতিল করতে হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হুমকিতে ভেনেজুয়েলার বহু আন্তর্জাতিক ফ্লাইট স্থগিত হওয়ায় দেশটিতে ভ্রমণ কঠিন হয়ে পড়েছে। এখন লাতিন আমেরিকার এ দেশটিতে প্রবেশের অন্যতম রুট হয়েছে কলম্বিয়ার সীমান্ত শহত কুকুটা। যা একটি সেতুর মাধ্যমে দুই দেশের সংযোগ স্থাপন করেছে। ছুটির মৌসুমে যাত্রী এই পথে ভিড় জমাচ্ছেন।





