থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া যুদ্ধে নিহত উভয় দেশের কমপক্ষে ২০ জন, বাস্তুচ্যুত ৬ লাখ

আবারো সংঘাতে জড়ালো থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া
আবারো সংঘাতে জড়ালো থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া | ছবি: সংগৃহীত
0

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির আহ্বানের পরও থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিমান হামলার অভিযোগ তুলেছে কম্বোডিয়া। বিতর্কিত অঞ্চল থেকে কম্বোডিয়া সেনা প্রত্যাহার এবং ল্যান্ডমাইন না সরালে সামরিক পদক্ষেপ অব্যাহত রাখার হুমকি থাইল্যান্ডের। এর আগে শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দু'দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপ শেষে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া ফের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে বলে জানান ট্রাম্প। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) থেকে শুরু হওয়া লড়াইয়ে উভয় দেশে কমপক্ষে ২০ জন নিহত এবং আনুমানিক ৬ লাখ বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে শুক্রবার ফোন করার পরও দু’দেশের মধ্যে সংঘাত উত্তেজনা থামাতে ব্যর্থ হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও ফোনালাপ শেষে ফের দু’দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে বলে দাবি ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্টের। কিন্তু ১২ ঘণ্টা না যেতেই শনিবার ভোরে থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিমান হামলার অভিযোগ তুলেছে কম্বোডিয়া।

ট্রাম্পের আহ্বান উপেক্ষা করে থাই সেনারা হামলা চালাচ্ছে বলে দাবি করে বিবৃতিও দিয়েছে নমপেন। হোটেল ও সেতুর ওপর থাই বিমান হামলার কথাও উল্লেখ করেছে দেশটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর মধ্য দিয়ে এবার ৬দিনে গড়ালো সংঘাত উত্তেজনা। বাড়ছে হতাহত ও বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা। আতঙ্কে সময় কাটছে সীমান্তের উভয় পাশের লাখ লাখ বাসিন্দার। এখনও নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে ছুটছে অসংখ্য মানুষ।

কম্বোডিয়ার বাসিন্দাদের মধ্যে একজন বলেন, ‘ঘর থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেয়ারও সময় পাইনি। আমার নাতি-নাতনিদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। আমি প্রতিদিন প্রার্থনা করি এ সংঘাত বন্ধ হোক। আমরা শান্তিতে বাস করতে চাই।’

আরেকজন বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নবজাতক থেকে শুরু করে বয়স্ক, সব বেসামরিক নাগরিকদের জন্য এটি জরুরি। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা কঠিন। ছোট বাচ্চাদের নিয়ে ভালোভাবে ঘুমানো যায় না।’

আরও পড়ুন:

নতুন করে সংঘাত শুরু করার জন্য কোন পক্ষ প্রথমে হামলা বা গুলি চালিয়েছে তা যাচাই করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং মালয়েশিয়ার প্রতি আজ (শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর) আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেট। ২৬ অক্টোবর মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুসারে এবারও শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা অব্যাহত রাখার দাবি কম্বোডিয়ার।

এদিকে ফোনালাপে ট্রাম্পের কাছে কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে ল্যান্ডমাইন পুতে রাখার অভিযোগ তুলে ধরেছেন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল। বিতর্কীত অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার এবং ল্যান্ডমাইন তুলে না নেয়া পর্যন্ত কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ অব্যাহত রাখার কথাও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আনুতিন। এটিকে নিজেদের সার্বভৌমত্ব এবং জনগণকে রক্ষার লড়াই বলেও অভিহিত করেছেন তিনি।

থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সংঘাত শুরুর বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছি। অন্যথায়, তিনি ভাবতে পারেন যে আমরাই কম্বোডিয়ার উপর প্রথম আক্রমণকারী, যা মোটেও সত্য নয়। আমরা পাল্টা লড়াই চালিয়েছি। যুদ্ধবিরতি নিশ্চিতে কম্বোডিয়াকে আগে সৈন্য প্রত্যাহার করতে হবে। এছাড়া পুঁতে রাখা ল্যান্ডমাইনগুলোও অপসারণ করতে হবে।’

পান্না ত্রিভুজ নামের একটি ভূখণ্ডকে উভয় দেশই নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে দাবি করায় থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়ার দ্বন্দ্ব ১১৮ বছরের পুরনো। এর আগে, ৫ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর গত ২৮ জুলাই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় দুই দেশ। ২৬ অক্টোবর হয় এ শান্তিচুক্তি।

বিতর্কীত সীমান্তে কম্বোডিয়া নতুন করে স্থল মাইন পুঁতে রাখার অভিযোগ তুলে ১১ নভেম্বর চুক্তি স্থগিত করে থাইল্যান্ড। ৭ ডিসেম্বরের বেশ কয়েকজন থাই সেনা হতাহতের ঘটনায় ৮ ডিসেম্বর কম্বোডিয়ায় বিমান হামলায় নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে উত্তেজনা।

এসএইচ