দ্রুত প্রবৃদ্ধি সিরিয়ার অর্থনীতির, ফিরে এসেছে শরণার্থীরা—তবুও রয়েছে চ্যালেঞ্জ

সিরিয়ার অর্থনীতির দ্রুত প্রবৃদ্ধি হয়েছে ও শরণার্থীরাও ফিরে এসেছে
সিরিয়ার অর্থনীতির দ্রুত প্রবৃদ্ধি হয়েছে ও শরণার্থীরাও ফিরে এসেছে | ছবি: সংগৃহীত
0

আসাদ সরকারের পতনের এক বছরে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতা বেড়েছে সিরিয়ার। বিশ্বব্যাংকের ধারণার চেয়ে দ্রুত প্রবৃদ্ধি ঘটেছে দেশটির অর্থনীতির। ফিরে এসেছে রেকর্ড সংখ্যক শরণার্থীও। তবে আহমদ আল-শারার নেতৃত্বে দেশ পুনর্গঠনে এখনো চ্যালেঞ্জ রয়েই গেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সিরিয়াকে সমর্থন করে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছে জাতিসংঘ। এদিকে আসাদের পতনের বর্ষপূর্তিতে হামার শহরে বিশাল সমাবেশের আয়োজন করে বাসিন্দারা।

বাবার মৃত্যুর পর সিরিয়ার ক্ষমতায় বসেন বাশার আল-আসাদ। উত্তরাধিকার সূত্রেই পান নিয়ন্ত্রিত ও দমনপীড়নমূলক রাজনৈতিক কাঠামো। ২০১১ সালে সরকারবিরোধী আন্দোলন নৃশংসভাবে দমনের জন্য ইতিহাসে কুখ্যাত হয়ে আছেন আসাদ। দীর্ঘ ১৪ বছরের গৃহযুদ্ধে ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর দামেস্ক দখলের পর পতন ঘটে ৬ দশকের বাথ পার্টির শাসনের। ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ পালিয়ে যান রাশিয়ায়।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন বিদ্রোহী নেতা আহমেদ আল-শারা। বাতিল করা হয় সংবিধান। শাসনব্যবস্থার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলোও ভেঙে দেয়া হয়। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্কারকে অগ্রাধিকার দিয়ে মাঠে নামে নতুন সরকার। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেয় আল শারা সরকার।

দুই দশকেরও বেশি সময় পর বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে বৈঠক করে সিরিয়া। বেশিরভাগ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এমনকি হোয়াইট হাউজে ট্রাম্প আমন্ত্রণ জানান আহমেদ আল শারাকে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রথমবারের মতো ভাষণ দেন তিনি। সিরিয়াকে সন্ত্রাসবাদের তালিকা থেকে বাদ দেয় কানাডা।

শুধু তাই নয় বহু বিদেশি কোম্পানি বিলিয়ন ডলারের জ্বালানি চুক্তি স্বাক্ষর করে সিরিয়ার সঙ্গে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের দাবি, ২০২৫ সালে সিরিয়ার অর্থনীতির গতি বিশ্বব্যাংকের অনুমানের চেয়ে দ্রুত বেড়েছে।

সিরিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুল কাদের আলহুসরিহ বলেন, ‘আমাদের কাছে কিছু তথ্য আছে। সিরিয়ার মুদ্রাস্ফীতির হার বর্তমানে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। দেশের অর্থনীতি এবং জনসংখ্যার আকার বিবেচনা করে সিরিয়াকে একটি অর্থনৈতিক হাব হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য আমাদের । এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই সিরিয়ার বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে।’

আরও পড়ুন:

আসাদ সরকারের পতনের এক বছরের মধ্যে রেকর্ড সংখ্যক বাস্তুচ্যুত ও শরণার্থী সিরিয়ায় ফিরে এসেছে। যারা দেশটির অর্থনীতি পুনর্গঠন ও জিডিপিতে বড় অবদান রেখেছে। গেল এক বছরে সিরিয়ার ফিরে এসেছে প্রায় ২৫ লাখ শরণার্থী।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব, ঐক্য ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের প্রতিনিধিরা।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি স্যামুয়েল জবোগার বলেন, ‘সিরিয়ার প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সংহতি ও সমর্থনের মিশন অর্জন আমাদের অন্যতম লক্ষ্য ছিল। সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব, ঐক্য, স্বাধীনতা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি আমাদের স্পষ্ট সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছি। নিরাপত্তা পরিষদের বার্তাটি সহজ এবং স্পষ্ট। নতুন সিরিয়া গঠন এবং উন্নত ভবিষ্যতের বিনির্মানে তাদের পাশে আছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।’

এদিকে আসাদ সরকারের পতনের এক বছর পূর্তিতে হামার শহরে সমাবেশ করেন লাখো মানুষ। জাতীয় পতাকা উড়িয়ে বিজয় স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে সমাবেশস্থল।

আসাদ সরকারের আমলে নির্মিত নির্যাতন কেন্দ্র ও গোপন কারাগারগুলোকে রূপ দেয়া হয়েছে ক্যাফে ও থিয়েটার ক্লাসে। যেখানে একসময় অন্ধকার কক্ষে বিরোধীদের নিপীড়ন চালাতো আসাদ বাহিনী এখন সেখানে মানুষজন তাদের আয়েশী সময় কাটাচ্ছে।

২০১১ সালে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ছিল সিরিয়ার বিভিন্ন শহর। স্বৈরশাসক আসাদের পতনের পর ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হচ্ছে সিরিয়ার জনজীবন। তবে চাকরি, বাসস্থান, চিকিৎসা এসব ক্ষেত্রে এখনো বড় ঘাটতি রয়ে গেছে। এছাড়া, আঞ্চলিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংঘাতে উদ্বেগে রয়েছে সংখ্যালঘু কুর্দি, দ্রুজ ও আলাউইরা।

এসএইচ