ভারত সফরে পুতিন: বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারই অন্যতম লক্ষ্য

ভ্লাদিমির পুতিন ও নরেন্দ্র মোদি
ভ্লাদিমির পুতিন ও নরেন্দ্র মোদি | ছবি: সংগৃহীত
0

ভারত সফরের আগ মুহূর্তে ভারতীয় গণমাধ্যমে জ্বালানি তেল ক্রয়, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি ও ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও খোলামেলা কথা বললেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। দনবাস অঞ্চল রাশিয়ার দখলে থাকবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। এদিকে, বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারই ভারত সফরের অন্যতম লক্ষ্য বলে জানায় মস্কো। আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনে পুতিনকে বরণ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এরপর তার আমন্ত্রণে নৈশভোজে অংশ নেন পুতিন।

দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভারতে পা রাখেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দরে তাকে আলিঙ্গন করে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখান থেকে এক গাড়িতে করেই যাত্রা করেন দুজন। সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, বন্ধু পুতিনকে স্বাগত জানাতে পেরে আনন্দিত তিনি। এরপর মোদির আমন্ত্রণে সরকারি বাসভবনে একান্ত নৈশভোজে অংশ নেন পুতিন। প্রায় তিন ঘণ্টার এই আয়োজনে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে দুই নেতার মধ্যে।

এমন এক সময়ে পুতিন ভারত সফরে আসলেন, যখন রাশিয়ার জ্বালানি তেল কেনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চাপে আছে ভারত। এছাড়া, যুদ্ধ বন্ধে মস্কো ও কিয়েভের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। কয়েক দশকের ঘনিষ্ঠ মিত্র ভারত ও রাশিয়া। শুধু তাই নয় পুতিন ও মোদির ব্যক্তিগত সম্পর্কও উষ্ণ। রাশিয়ার বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী ও ব্যবসায়ীদের একটি বিশেষ প্রতিনিধি দল পুতিনের সফরসঙ্গী হয়েছেন।

পারস্পরিক বাণিজ্য বৃদ্ধি, কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারই এই সফরের মূল লক্ষ্য বলে জানায় দুই দেশ। ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়েছে ভারত ও রাশিয়া। ২০২১ সাল থেকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ক্রমাগত বাড়লেও, সম্প্রতি তা আবার কমতে শুরু করেছে। এর পেছনে মূলত প্রভাব ফেলেছে ট্রাম্পের শুল্কনীতি ও নিষেধাজ্ঞা।

আরও পড়ুন:

বাণিজ্যে ভারসাম্য রক্ষায় ভারতীয় পণ্য আমদানি বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে রাশিয়া। সেই লক্ষ্যেই কাজ করবেন রুশ ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে রাশিয়ান আমদানি বাণিজ্যে ভারতীয় পণ্যের অবদান মাত্র ২ শতাংশ। এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে একটি কৌশলগত পথ তৈরি হবে মনে করে মস্কো ও নয়াদিল্লি। অটোমোবাইল, ইলেকট্রনিক্স পণ্য, ভারী যন্ত্রপাতি, টেক্সটাইল ও খাদ্যদ্রব্য রপ্তানি করতে চায় ভারত।

এদিকে, ভারত সফরের আগে ভারতীয় এক গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে পুতিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি রুশ জ্বালানি তেল কিনতে পারে, তাহলে ভারত কিনলে দোষ কোথায়।

ট্রাম্পের শুল্কনীতি মোকাবিলার ভারত ও রাশিয়ার ভূমিকা নিয়ে করা প্রশ্নে পুতিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মনে করে এ ধরনের শুল্ক তাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে। তবে আমাদের আশা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়মগুলো সবাই মেনে চলবে।

এদিকে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে ট্রাম্পের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন পুতিন। তবে দনবাস অঞ্চল নিয়ে কড়া হুশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। পুতিনের দাবি, দনবাসের ৮৫ শতাংশ অঞ্চল মস্কোর দখলে। এখন সেখান থেকে হয় ইউক্রেনীয় সেনাদের প্রত্যাহার করতে হবে, তা নাহলে এটি জোরপূর্বক দখল করবে রাশিয়া। যুদ্ধ অবসানে মস্কো কোনো আপসে যাবে না।

রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সফর ঘিরে সাজ সাজ রবে সেজেছে নয়াদিল্লি। মোদি ও পুতিনের ছবি সম্বলিত পোস্টার ও ব্যানার শোভা পাচ্ছে সব জায়গায়। ভারতের অমৃতসর শহরে পুতিনের সাত ফুট উঁচু একটি প্রতিকৃতি এঁকেছেন করেছেন এক শিল্পী। এছাড়া, দেশটির পবিত্র নগরী হিসেবে পরিচিত বারাণসীতে গঙ্গার তীরে এক হাজারেরও বেশি প্রদীপ জ্বেলে পুতিনের নাম লিখে স্বাগত জানান।

ইএ