নিজেদের জমি অথচ সেখানেই যেন পা ফেলতে বারণ, এমন ঘটনা আর্জেন্টিনার। ভয়াবহ বন্যার কারণে নিজের কৃষি জমিতেই প্রবেশ করতে পারছেন না দেশটির মধ্য বুয়েনস আইরেস প্রদেশের কৃষকরা। আর এতেই সয়াবিন ও ভুট্টা উৎপাদনে ভাটা পড়েছে। আর আর্জেন্টিনা বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ শস্য রপ্তানিকারক দেশ হওয়ায় চিন্তিত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আমদানিকারকরা।
স্থানীয় কৃষক আলেজান্দ্রো ভ্যালান প্রতি বছর নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে শস্য রোপণ করে থাকেন। তবে এ বছর বন্যার কারণে এখনো ফসলি জমিতে প্রবেশ করতে পারেননি। মধ্য বুয়েনস আইরেসের একটি এলাকা প্লাবিত হওয়ায় জমির প্রবেশপথে আটকা পড়তে হয়েছে তাকে।
কৃষক আলেজান্দ্রো ভ্যালান বলেন, ‘আমার পিছনের অংশটি দেখতে খাল মনে হলেও এটি একটি সড়ক। রাস্তাটি দিয়ে আমরা নিয়মিত চলাচল করি। জমিতে যাওয়া আসা করতে এটি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু পুরো সড়কটি পানিতে ডুবে আছে। এ অঞ্চলে প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
আর্জেন্টিনা বিশ্বের বৃহত্তম কৃষি পণ্য রপ্তানিকারক। বিশেষ করে সয়াবিন তেল ও ভুট্টা রপ্তানিতে বেশ শক্ত অবস্থান রয়েছে দেশটির। বুয়েনস আইরেস গ্রেন এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে ৪৮.৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন সয়াবিন ও ৫৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন ভুট্টার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
গ্রামীণ উৎপাদকদের সংগঠন কার্বাপ বলছে, গেলো ৪ মাসে বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হওয়ায় বুয়েনস আইরেসের মধ্য ও পশ্চিমাঞ্চলে প্রায় ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন হেক্টর কৃষি জমি নষ্ট হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।
কৃষকদের আশঙ্কা বিশাল জলাবদ্ধতায় ডুবে যাওয়া জমিগুলো বাকি পুরো মৌসুমজুড়ে অকেজো থাকতে পারে। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে তাদের।
স্থানীয় কৃষকদের একজন বলেন, ‘গবাদি পশু ও কৃষির জন্য গ্রীষ্মকালীন চারণভূমি তৈরি করার এখনই সময়। পানির কারণে সয়াবিন রোপণ করতে পারছি না। জমিতে কোন কৃষি সরঞ্জাম পৌঁছানোও সম্ভব হচ্ছে না।’
গ্রেন এক্সচেঞ্জের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, সয়াবিন রোপণ মাত্র ১২ দশমিক ৯ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। যা গেল ৫ বছরের তুলনায় ৩ দশমিক ৩ শতাংশ কম। যার একমাত্র কারণ বন্যা। এছাড়া আর্জেন্টিনার প্রধান কৃষি প্রদেশ বুয়েনস আইরেসে ভুট্টা রোপণেও উল্লেখযোগ্য সময় লেগেছে বলে জানিয়েছে বেশ কয়েকটি কৃষি গবেষণা সংস্থা।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও গ্রামীণ রাস্তাঘাটে বছরের পর বছর বিনিয়োগ কম করায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন প্রদেশটির মধ্যাঞ্চলের কৃষকরা।
অন্য আরেকজন কৃষক বলেন, ‘চোখের সামনে এ উৎপাদনশীল জমিগুলো প্লাবিত হয়ে যাওয়া খুব কষ্ট দিচ্ছে। স্থানীয় অনেক পরিবার কৃষি পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। তারা আজ অসহায়ের মতো দিন কাটাচ্ছে। প্রকৃতির বিরুদ্ধে কিছুই করা সম্ভব নয়। গ্রীষ্মই এখন আমাদের একমাত্র মিত্র।’
এছাড়া সালাদো নদীর তীরবর্তী হওয়ায় এ অঞ্চলের বন্যা ঝুঁকি সবসময়ই প্রবল। যে কারণে ক্ষতির মাত্রাও অনেকগুণ বেশি।





