দিল্লির লালকেল্লায় বিস্ফোরণে ব্যবহৃত হয়েছে ‘অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট’

দিল্লির লালকেল্লায় বিস্ফোরণ
দিল্লির লালকেল্লায় বিস্ফোরণ | ছবি: সংগৃহীত
0

দিল্লির লালকেল্লায় বিস্ফোরণে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট জ্বালানি মিশ্রণ ব্যবহৃত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। হামলার আগের দিন দিল্লির অদূরে প্রায় ৩০০ কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট উদ্ধার করা হয়। এর আগেও ভারতে এই দ্রব্য ব্যবহার করে বেশ কয়েকটি হামলা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী হামলায় বহুলভাবে ব্যবহৃত হয় এ পদার্থ। যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশে বেশ বড় ধরনের হামলায় সন্ত্রাসীরা এসব দ্রব্য ব্যবহার করেছিল।

অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট এক ধরনের গন্ধহীন, সাদা কঠিন রাসায়নিক যা মূলত সার হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বিশ্বের বেশিরভাগ ফসল চাষ এখন এই সারের ওপর নির্ভরশীল। তবে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরক হিসেবে বিবেচিত না হলেও, শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। উচ্চ তাপমাত্রায় দীর্ঘ সময় জ্বলতে পারে এটি। দাহ্য পদার্থের সংমিশ্রণে আসলে এর শক্তি বেড়ে যায় কয়েক গুণ।

জ্বালানি তেলের সঙ্গে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মিশ্রিত করে সাধারণত নির্মাণ বা খনির শিল্পে বিস্ফোরক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটি সস্তা এবং বিস্ফোরক তৈরি অনেক সহজ বলে এর জনপ্রিয়তাও অনেক। যদিও সংরক্ষণ পদ্ধতি অনেক জটিল।

দিল্লির ফরেনসিক বিভাগের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, সোমবার দিল্লির লালকেল্লায় গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ব্যবহার হয়েছিল। বিস্ফোরিত বোমাটিতে অনির্দিষ্ট পরিমাণে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট জ্বালানি তেল একটি ডিভাইসে ছিল। এটিকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে বিবেচনা করেই তদন্ত শুরু করেছে ভারতের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতো ভয়াবহ ছিল যে আশেপাশের অন্তত ২২টি গাড়িতেও আগুন ধরে যায়। রোববার দুটি আবাসিক ভবন থেকে ৩০০ কেজিরও বেশি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট উদ্ধার করে পুলিশ।

আরও পড়ুন:

বিশ্বব্যাপী বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলায় অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। যার মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা ছিল ১৯৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমাতে। সরকারবিরোধী চরমপন্থিদের এই হামলায় প্রাণ হারান অন্তত ১৬৮ জন। বিস্ফোরণে ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আশপাশের তিন শতাধিক ভবন। ১৯৭০ সালে উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এই পদার্থ ব্যবহার করে বোমা হামলা চালানো হয়। এছাড়া, ২০২০ সালে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ৩,০০০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটে আগুন লেগে যায়। এতে তীব্র বিস্ফোরণে প্রাণ হারায় দুই শতাধিক মানুষ। আহত হয় ৬ হাজারের বেশি।

ভারতেও সন্ত্রাসী হামলায় এই বিস্ফোরক ব্যবহারের উদাহরণ আছে। ২০১২ সালে পুনের মহারাজ রোডে বিস্ফোরণ হয়েছিল। পরে সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় অ্যামোনিয়া নাইট্রেট মিশ্রিত ছয়টি ডিভাইস। গেল বছর মুম্বাইয়ের বিভিন্ন এলাকায় বিস্ফোরণে হতাহত হয় বহু মানুষ।

২০১২ সালে প্রণীত ভারতীয় আইনে আছে, ওজন অনুসারে ৪৫ শতাংশের বেশি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের সঙ্গে দাহ্য পদার্থ থাকলে তাকে বিস্ফোরক বলা হবে। এই পদার্থ বিক্রি এবং সংরক্ষণেও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার বিধান আছে।

এসএইচ