হারিকেন মেলিসা: ধ্বংসস্তূপ উপকূল, লাখো মানুষ এখনো পানিবন্দি

মেলিসার তাণ্ডব
মেলিসার তাণ্ডব | ছবি: সংগৃহীত
0

ক্যারিবীয় সাগরে সৃষ্ট এ বছরের সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড় হারিকেন মেলিসা। ঘণ্টায় প্রায় ২৯৫ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়টি জ্যামাইকার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় হিসেবে নাম লিখিয়েছে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গ্রাম, শহর, উপকূল। বিদ্যুৎহীন, পানিবন্দি লাখো মানুষ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়ানক এক সতর্কবার্তা।

জ্যামাইকার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের নাম এখন মেলিসা। ২৮ অক্টোবর, স্থানীয় সময় সোমবার সকালে, ঘূর্ণিঝড় মেলিসা ক্যাটাগরি ফাইভ শক্তি নিয়ে ঘণ্টায় প্রায় ২৯৫ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানে দেশটিতে। যা এখন পর্যন্ত দ্বীপরাষ্ট্রটিতে আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়।

ক্যারিবীয় সাগরের অস্বাভাবিক উষ্ণ পানির ওপর দিয়ে এগিয়ে আসার সময় মেলিসা দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করে। মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এটি সাধারণ ট্রপিক্যাল ঝড় থেকে পরিণত হয় ভয়াবহ ক্যাটাগরি ফাইভ ঘূর্ণিঝড়ে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই দ্রুত তীব্রতা বৃদ্ধিই এখন নতুন বাস্তবতা।যেখানে উষ্ণ সমুদ্রের কারণে ঝড়গুলো অল্প সময়েই অনেক বেশি শক্তি অর্জন করে বিধ্বংসী ঝড়ে রূপ নিচ্ছে।

মেলিসার আঘাতে পুরো এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। অসংখ্য ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। আর বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে প্রায় ৭৭ শতাংশ মানুষ। সেন্ট এলিজাবেথের একমাত্র সরকারি হাসপাতালটি বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে এবং ভবনের একটি অংশ ধসে যায়।

আরও পড়ুন:

শক্তিশালী এ ঝড়ে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও অনেক। আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, শুধু জ্যামাইকাতেই ঘূর্ণিঝড় মেলিসার কারণে ক্ষতি ও অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা পুনর্গঠনে এক দশক পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।

জ্যামাইকার পাশের দেশগুলোতেও প্রবল বেগে আঘাত হানে এ দুর্যোগ। হাইতিতে ঝড় সরাসরি আঘাত না হানলেও, টানা কয়েক দিনের ভারি বৃষ্টিতে দেশটির দক্ষিণাঞ্চল প্লাবিত হয়। পেতিত গোয়াভ শহরে নদীর পানি বেড়ে ভেসে যায় বাড়িঘর।

এ বিপর্যয়ের পর আবারও সরব ক্যারিবীয় দেশগুলোর নেতারা। তারা বলছেন, ধনী ও শিল্পোন্নত দেশগুলো যারা সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণ করে, তাদের উচিত এই ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ ও আর্থিক সহায়তা দেয়া।

"লস অ্যান্ড ড্যামেজ" নামে জাতিসংঘের যে তহবিল ২০২৩ সালে তৈরি হয়, সেটি এখনো পর্যাপ্ত অর্থ পাচ্ছে না। ২০২৫ সালের মার্চে যুক্তরাষ্ট্র সেই তহবিলের বোর্ড থেকে সরে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।

এখনও পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিভিন্ন দেশ থেকে জ্যামাইকার জন্য নগদ সহায়তা, খাদ্য ও উদ্ধার দল পাঠানোর ঘোষণা এসেছে। জ্যামাইকা এখন তার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মানবিক ও জলবায়ুজনিত বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে আছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

ইএ