চীন-তাইওয়ানের মধ্যে ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ নীতিতে অসমঝোতায় যুদ্ধের শঙ্কা

‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ নীতিতে অসমঝোতা চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে | ছবি: সংগৃহীত
0

এক দেশ, দুই ব্যবস্থা কোনো নীতি হতে পারে না, শক্তিই পারে তাইওয়ানের প্রকৃত শান্তি নিশ্চিত করতে— চীনকে উদ্দেশ করে এমন শক্ত অবস্থানের বার্তা দিলেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে। চীন-তাইওয়ানের মধ্যে এমন উত্তেজনা শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে রূপ নেয় কি না তা নিয়ে শঙ্কিত ফিলিপিন্সের বাটানেস দ্বীপপুঞ্জের বাসিন্দারা। এমনটা হলেও নিজেদের জীবন-জীবিকায় নেতিবাচক প্রভাব পড়া ছাড়াও দ্বীপটির নিরাপত্তা হুমকিতে পড়তে পারে বলেও শঙ্কা বাসিন্দাদের।

যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অস্ত্র ক্রয় বাড়ানো ছাড়াও যৌথ উৎপাদনের পথে হাঁটছে তাইওয়ান। এতে নতুন করে চীন-তাইওয়ান উত্তেজনার পারদ এখন তুঙ্গে। গত বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে তাইওয়ান প্রসঙ্গ কৌশলে এড়িয়ে গেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি-জিনপিং।

এমন পরিস্থিতিতে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অস্ত্র সহযোগিতা বাড়ানোর চেষ্টায় তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে’র বিরুদ্ধে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ তুলেছে চীন।

বেইজিং বলছে, এক দেশ, দুই ব্যবস্থা ছাড়া তাইওয়ান সমস্যার সমাধান অসম্ভব। আর তা না হলে ভবিষ্যতে তাইওয়ান দখলে শক্তি প্রয়োগের হুঁশিয়ারিও দেয়া হয়।

চীনের তাইওয়ান বিষয়ক মুখপাত্র পেং কিং ইন বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ পুনর্মিলন এবং “এক দেশ, দুই ব্যবস্থা” তাইওয়ান ইস্যুতে চলমান সমস্যা সমাধানের মূল নীতি। আর এটিই হলো জাতীয় পুনর্মিলন বাস্তবায়নে সর্বোত্তম উপায়। আমরা শান্তিপূর্ণ পুনর্মিলনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সর্বোচ্চ আন্তরিক। তবে শক্তি প্রয়োগ প্রচেষ্টা কখনো বাদ দেয়া হবে না। প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থার বিকল্প উপায়ও আমাদের কাছে রয়েছে।’

পাল্টা জবাবে, চীনের ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ নীতি কখনোই মেনে নেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে। এমনকি নিজের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র অটুট রাখার পাশাপাশি আত্মরক্ষায় দৃঢ় সংকল্প থেকে তাইওয়ান কোনোভাবেই পিছু হটবে না বলে চীনের প্রতি কড়া বার্তাও দেন এ নেতা।

আরও পড়ুন:

তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে বলেন, ‘শান্তি কেবল শক্তির মাধ্যমেই অর্জন করা যেতে পারে। শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর শান্তির নিশ্চয়তা দেয় না। আক্রমণকারীর দাবি মেনে নেয়া এবং সার্বভৌমত্ব ত্যাগ করার মাধ্যমে শান্তি অর্জন সম্ভব নয়। তাই চীনের ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ আমরা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করি।’

চীন-তাইওয়ান উত্তেজনা বৃদ্ধির পরিণতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে কি-না, সেই শঙ্কায় দিন কাটছে ফিলিপিন্সের বাটানেস দ্বীপপুঞ্জের বাসিন্দাদের। জীবন-জীবিকা হুমকিতে পড়বে- এমন আশঙ্কায় ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা।

ফিলিপিন্সের বাটানেস দ্বীপপুঞ্জের বাসিন্দাদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমাদের জীবিকার একটি বড় অংশ আসে মাছ শিকারের মাধ্যমে। খাদ্য ব্যয় বাড়তে পারে। তাই চীন এবং তাইওয়ান যাতে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে না জড়ায় সেই প্রত্যাশা করছি।’

আরেকজন বলেন, ‘খুব কাছাকাছি হওয়ায় আমরা চীন এবং তাইওয়ান উত্তেজনার ভুক্তভোগী হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।’

তবে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি কী হতে পারে তা এখনই বলা কঠিন। যদি পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়, তাহলে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এরমধ্যে আয়ের এক নম্বর উৎস পর্যটন খাত অন্যতম।

বেইজিং-তাইপে সংকটে কিছুতেই যেন নিজেদের জাতীয় স্বার্থ হুমকিতে না পরে সেজন্য চোখ-কান খোলা রেখে এগোচ্ছে ফিলিপিন্স। বিশেষ করে বাটানেস দ্বীপপুঞ্জের নিরাপত্তা জোরদারে নেয়া হচ্ছে নানা পরিকল্পনা।

এসএইচ