শুল্ক ইস্যুতে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোকেও একচুল ছাড় দেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর ব্যতিক্রম নয় এশিয়ার দেশ ভারতও। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দারুণ সখ্যতা থাকলেও গেল আগস্টে রাশিয়ার থেকে তেল কেনার জেরে ভারতের ওপর শাস্তিস্বরূপ ৫০ শতাংশ শুল্ক বসায় ট্রাম্প।
যদিও চলমান শুল্ক উত্তেজনার বরফ গলাতে শুরু করেছে ওয়াশিংটন। গত মঙ্গলবার মোদির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ট্রাম্প। যেখানে গুরুত্ব পায় শুল্ক ইস্যু। এরপর ভারতীয় গণমাধ্যম মিন্টের বরাতে রয়টার্স জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করা ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্কের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমাতে পারে হোয়াইট হাউস।
তবে এখনো এটি কার্যকর না হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতেই হচ্ছে ভারতের রপ্তানিমুখী শিল্পের সঙ্গে জড়িত সবাইকে। চিংড়ি, তৈরি পোশাক, ওষুধ শিল্পের পর কপালে চিন্তার ভাঁজ ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের কার্পেট শিল্পের উদ্যোক্তা ও শ্রমিকদের মাঝে।
গুলজার আহমেদ ভাট। ৩৫ বছর ধরে শ্রীনগরের কাপের্ট শিল্পের বুননের সঙ্গে জড়িত তিনি। তবে ট্রাম্পের শুল্ক চাপে, অর্ডার কমে যাওয়ায় সম্প্রতি পরিবারের রুটি-রুজির জোগানে দীর্ঘদিনের পেশা ছেড়েছেন ভাট।
আরও পড়ুন:
গুলজার আহমেদ ভাট বলেন, ‘আমার চার সন্তান রয়েছে। তাদের শিক্ষাসহ ভরণপোষণের সব খরচ মেটাতে নতুন উপায় খুঁজতে আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এ কারণে দুই দিন ধরে চা বিক্রি শুরু করেছে। আমি আশাবাদী এর মাধ্যমে ভালোভাবে পরিবার নির্বাহ করতে পারব।’
রয়টার্স জানায়, ভারতের মোট হস্তনির্মিত কার্পেটের ৬০ শতাংশের ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্র। তবে ট্রাম্পের শুল্কের জেরে গত দুই মাসে কমেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ক্রয় অর্ডার। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, সেপ্টেম্বরে ভারতের কার্পেট ও হস্তশিল্পের রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় ১৬ শতাংশেরও বেশি কমেছে।
কাশ্মীর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি জাভিদ আহমেদ টেঙ্গা বলেন, ‘২০২৩-২৪ অর্থবছরে হস্তশিল্প রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১,১৬০ কোটি রুপি যা ২৪-২৫ অর্থবছরে এসে ৪০ শতাংশ কমে ৭৩৩ কোটি রুপিতে দাঁড়িয়েছে।’
জম্মু-কাশ্মির ইন্ডাস্ট্রি চেম্বার জানায়, কাশ্মীরের প্রায় ৪ লাখ মানুষ হস্তশিল্পের সঙ্গে জড়িত। অনেকে এতো প্রতিকূলতার মধ্যেও টিকে রেখেছেন বাপ-দাদার ঐতিহ্য।
শুল্কের প্রভাবে রপ্তানির সর্বোচ্চ মৌসুম অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরেও আসছে না বড় কোনো অর্ডার। অনেক পণ্য অবিক্রীত অবস্থায় কারখানায় পড়ে আছে। এতে ব্যবসায়ের স্বাভাবিক চক্র রয়েছে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। যদিও শিল্পটি বাঁচাতে উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা দিতে এবং পণ্য বিক্রির নতুন বাজার খুঁজতে উদ্যোগ নিয়েছে নয়াদিল্লী। তবে এটিকে সময়সাপেক্ষ বলছেন ক্ষতিগ্রস্ত রপ্তানিকারকরা।





