ভেনেজুয়েলার নির্বাচনের পর থেকেই আত্মগোপনে ছিলেন নোবেল জয়ী মাচাদো

মারিয়া করিনা মাচাদো | ছবি: এএফপি
1

ট্রাম্পের বহু আকাঙ্ক্ষিত নোবেল শান্তি পুরস্কার পেলেন ভেনেজুয়েলার গণতন্ত্রপন্থী মারিয়া কোরিনা মাচাদো। গেল বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর থেকেই আত্মগোপনে আছেন এ নেত্রী। ভেনেজুয়েলার মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং স্বৈরশাসন থেকে গণতন্ত্রের শান্তিপূর্ণ রূপান্তর নিশ্চিতে অক্লান্ত পরিশ্রমের স্বীকৃতি তার এ সম্মাননা। এদিকে নোবেল পাওয়ায় মারিয়া কোরিনা মাচাদোকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

শান্তিতে নোবেল। বহু বিতর্ক সত্ত্বেও বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এ সম্মাননা। এর দাবিদার হিসেবে প্রকাশ্যে প্রচার চালিয়ে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবছরও ধরা দিলো না সে স্বপ্ন। ট্রাম্পের স্বপ্ন ভঙ্গ করে এ বছর পুরষ্কারটি উঠছে ভেনেজুয়েলার গণতন্ত্রপন্থি নেত্রীর হাতে।

মারিয়া কোরিনা মাচাদো। চলতি বছর শান্তিতে নোবেল পুরষ্কারের জন্য ৩৩৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মনোনয়ন পেলেও সবকিছু ছাপিয়ে জয়জয়কার ৫৮ বছর বয়সী এ মানবাধিকার কর্মীর। অসলোর নরওয়েজিয়ান নোবেল ইন্সটিটিউট শুক্রবার জানায়, ভেনেজুয়েলার মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং স্বৈরশাসন থেকে গণতন্ত্রের শান্তিপূর্ণ রূপান্তর নিশ্চিতে মারিয়ার অক্লান্ত পরিশ্রমের স্বীকৃতি এ সম্মাননা।

নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির চেয়ার ইয়োরগেন উটনে ফ্রিডনেস বলেন, ‘২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরষ্কার পাচ্ছেন শান্তির একজন সাহসী এবং নিবেদিতপ্রাণ সৈনিক, একজন নারী যিনি ক্রমবর্ধমান অন্ধকারের মধ্যে গণতন্ত্রের শিখা জ্বালিয়ে রেখেছেন। ভেনেজুয়েলার গণতান্ত্রিক শক্তির নেত্রী হিসেবে, মারিয়া করিনা মাচাদোর নাম সাম্প্রতিক সময়ে লাতিন আমেরিকায় সাহসী জনগণের সবচেয়ে অসাধারণ উদাহরণগুলোর একটি।’

গেলবছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর থেকে অনেকটা আত্মগোপনে আছেন এ নেত্রী। কারাকাসে জন্ম নেয়া মারিয়ার রক্তেই রয়েছে বিদ্রোহের ইতিহাস। ভেনেজুয়েলান স্বৈরশাসক হুয়ান ভিসেন্তে গোমেজের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল তার পূর্বসূরীদের। শিল্প প্রকৌশলে পড়াশোনা করলেও, নিজ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গড়ে তোলা সুমাতের প্রতিষ্ঠাতা মারিয়া; অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য লড়ছেন ২০ বছরের বেশি সময় ধরে।

আরও পড়ুন:

২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলেও আদালতের বাধার মুখে আর আলো দেখেনি মারিয়ার সে প্রচেষ্টা। ২০১৩ সাল থেকে ভেনেজুয়েলার ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর বড় প্রতিদ্বন্দ্বী মারিয়া। এর আগে গেলো বছর মানবাধিকারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সর্বোচ্চ পুরষ্কারও জেতেন তিনি। নোবেল জয়ে মারিয়াকে অভিনন্দন জানিয়েছে জাতিসংঘ।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক মুখপাত্র থামিন আল-খিতান বলেন, ‘নোবেল শান্তি পুরষ্কার বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করায় আমরা মারিয়া করিনা মাচাদোকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। এই স্বীকৃতি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার এবং আইনের শাসনের প্রতি ভেনেজুয়েলার মানুষের স্পষ্ট আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন।’

এদিকে ২০২৫ সালে শান্তিতে নোবেলজয়ীর নাম ঘোষণার একদিন আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের মধ্যস্থতায় আসে গাজায় দুই বছরের ইসরাইলি আগ্রাসনে ইতি টানার ঘোষণা। আগেই এ পুরষ্কারের জন্য ট্রাম্পের নাম সুপারিশ করে ইসরাইল-পাকিস্তান। আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও বহু আকাঙ্ক্ষিত পুরষ্কারটি ঝুলিতে উঠলো না ট্রাম্পের। এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি জানায়, পুরষ্কারের প্রবর্তক আলফ্রেড নোবেলের তিন শর্তের সবগুলোই পূরণ করেছেন মারিয়া।

এসএস