ইরাকে লবণাক্ত পানির আঘাতে মৌমাছি বিলীন, হুমকিতে মধু উৎপাদন ও বাস্তুতন্ত্র

মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ
মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ | ছবি : সংগৃহীত
0

ইরাকের বন্দর নগরী বাসরাহ শহরের নদীর তীরের ফুল আর খেজুরের বাগানে ভরে থাকত মৌমাছি। আজ সেই সবুজ বনাঞ্চল শুকিয়ে গেছে, লবণাক্ত পানির প্রবাহে মারা যাচ্ছে মৌমাছিরা। মধুর উৎপাদনও হুমকির মুখে, আর ইরাকের প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রও ক্রমেই ক্ষয় হচ্ছে। জলবায়ুর পরিবর্তন এ অঞ্চলের জীবনের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করছে।

ইরাকের শক্তিশালী দুই নদী টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর সংযোগস্থলে অবস্থিত শাত্ত আল-আরব নদীর তীরে খেজুর বাগানে সমৃদ্ধি ছড়াতো লাখ লাখ মৌমাছি। কিন্তু খরার কারণে বাগানের সবুজ গাছগুলো শুকিয়ে গেছে এবং নদীর তীরে ছড়িয়ে থাকা মৌমাছিদের জীবন এখন ঝুঁকির মধ্যে।

গবেষকরা জানান, নদীপাড়ের খেজুর গাছের আর মাত্র এক চতুর্থাংশ বেঁচে আছে। লবণাক্ত পানি, তীব্র গরম এবং দীর্ঘস্থায়ী খরার কারণে মৌমাছিরা মারা যাচ্ছে।

তারা বলেন, ‘মৌমাছিরা পরিষ্কার পানির প্রয়োজন। পানি না থাকলে তারা মারা যায়। লবণাক্ত পানি তাদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ।’

আরও পড়ুন:

বাসরাহ শহরের চারপাশে একসময় ৪ হাজারের বেশি মৌচাক ছিলো। পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে অর্ধেকের বেশি মৌচাক ধ্বংস হয়ে গেছে। একসময় বসরা অঞ্চলে বছরে প্রায় ৩০ টন মধু উৎপাদন হতো। কিন্তু ২০০৭-০৮ সাল থেকে তা কমতে শুর করে। গেল পাঁচ বছরে ১২ টনে নেমে এসেছে। এই মৌসুমে তা কমে মাত্র ৬ টনে দাঁড়াতে পারে।

মধু চাষিরা বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে আমাদের মৌচাক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ মৌসুমে মধু উৎপাদন আগের তুলনায় ৫০% কমতে পারে। অনেক মৌমাছি পালক সম্পূর্ণভাবে তাদের হিভ হারিয়েছেন।’

বাসরাহতে গ্রীষ্মে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছায়। আর শাত্ত আল-আরবের লবণাক্ত পানি নদীর তীরে মধু উৎপাদনকে বিপর্যস্ত করছে। এতে শুধু মৌমাছি নয়, পুরো অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রই ঝুঁকির মুখে পড়ছে।

দশক দশক ধরে যুদ্ধ এবং পরিবেশগত পরিবর্তনের পরও, বাসরার মৌমাছি পালকরা তাদের ঐতিহ্য রক্ষা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক জল সংকট এবং চরম তাপপ্রবাহ এই প্রচেষ্টা কঠিন করে তুলেছে।

ইএ