গাজায় আগ্রাসন বন্ধ আর ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংকটের দ্বিপাক্ষিক সমাধানে চলতি বছর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিশ্ব নেতাদের সম্মেলনকে কাজে লাগাতে চায় ফ্রান্স ও সৌদি আরব।
নতুন কর্মপরিকল্পনায় গুরুত্ব পাচ্ছে ১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধে ইসরাইল দখলকৃত অঞ্চলে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, যা ঘটবার আগেই রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিন স্বীকৃতি পেয়ে গেছে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের।
জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে প্রায় দেড়শো দেশ এরই মধ্যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে, যার মধ্যে সবশেষ সংযোজন যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্ব রাজনীতির প্রভাবশালী দেশগুলো। কিন্তু তাও দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের পথে রয়েছে গুরুতর সব বাধা।
সৌদি-ফরাসি পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়গুলো পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেগুলো হলো চূড়ান্ত সীমানা নির্ধারণ, বসতি স্থাপনের ভবিষ্যৎ, অতীত যুদ্ধে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, জেরুজালেমের মর্যাদা এবং ইসরাইলকে ইহুদি রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দান।
চ্যাথাম হাউজের সিনিয়র কনসাল্টিং ফেলো অধ্যাপক ইয়সি মেকেলবার্গ বলেন, ‘দিনশেষে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান হলো এক বা অন্যভাবে দু’টি রাষ্ট্রের অস্তিত্ব, যা জর্ডান নদী এবং ভূমধ্যসাগরের মাঝামাঝি অঞ্চলে অবস্থিত। এর মধ্যে পশ্চিম তীর, গাজা এবং বর্তমানে ইসরাইল অন্তর্ভুক্ত। অঞ্চলটিকে দুই ভাগ করার উপায় খুঁজে বের করতে হবে, যেখানে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল ছাড়াও ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রও থাকবে। জেরুজালেমকে রাজধানী রেখে ভূখণ্ডের প্রত্যেকের জন্য একই স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’
এমন পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিকে ইসরাইলের ওপর আঘাত হিসেবে দেখছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। এ চাপ ঠেকাতে অবরুদ্ধ পশ্চিম তীর স্থায়ী আত্মসাৎসহ যেকোনো ধরনের একতরফা পদক্ষেপ নেয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছেন তিনি।
আরও পড়ুন:
অন্যদিকে, আগেই প্রেসিডেন্টসহ ফিলিস্তিনি সব কর্মকর্তাদের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে আসা ঠেকাতে তাদের ভিসা বাতিল করেছে ইসরাইলের ঘনিষ্ঠতম মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। সব মিলিয়ে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা অর্জনের স্বপ্ন যেন আরও নাগালের বাইরেই চলে যাচ্ছে।
কাউন্সিল ফর আরব-ব্রিটিশ আন্ডারস্ট্যান্ডিং ক্রিস ডয়লে বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের দেশকে, তাদের রাষ্ট্রের অধিকারকে স্বীকার করে নিচ্ছে অনেক অনেক দেশ। কিন্তু এ সময়েই যুক্তরাজ্য-ফ্রান্সসহ একই দেশগুলো গণহত্যা এবং ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধে প্রয়োজনীয় নিষেধাজ্ঞামূলক পদক্ষেপ নিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ।’
তবে ভোরের আলো ফোটার আগে রাতের অন্ধকার এটি, এমন আশায় কয়েক ধাপের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে ফ্রান্স ও সৌদি আরব। সম্ভাব্য প্রস্তাব, আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ শাসিত ডিমিলিটারাইজড রাষ্ট্র গঠন।
পরিকল্পনার আওতায় আছে গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন তাৎক্ষণিক বন্ধ ও পূর্ণাঙ্গ সেনা প্রত্যাহার। এছাড়া গাজার শাসকদল হামাসকেও অস্ত্র সমর্পণ ও রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন কমিটির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে, যে প্রস্তাবে আগেই সম্মতি দিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠনটি।
পূর্ব জেরুজালেম, পশ্চিম তীর আর গাজা নিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই মধ্যপ্রাচ্য সংকট সমাধানের একমাত্র উপায় বলে বিশ্ব সম্প্রদায় সমর্থন দিলেও; পূর্ব জেরুজালেম আগেই আত্মসাৎ করে নিজেদের রাজধানী ঘোষণা এবং গাজাকে দুই বছরের আগ্রাসনে ধসিয়ে দিয়েছে ইসরাইল।
এরপর নেতানিয়াহুর পশ্চিম তীরও আত্মসাৎ চেষ্টা হবে সব সীমার অতিক্রম, বলছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।





