গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে ইসরাইলি হামলায় নিহত ৭

গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে আহত অনেকে
গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে আহত অনেকে | ছবি: সংগৃহীত
0

গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে ইসরাইলি হামলার শিকার হয়ে নতুন করে আরো ৭ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে দুই দিনে প্রাণ গেছে অন্তত ১০ ফিলিস্তিনির। আহত অর্ধশতাধিক। এ ছাড়াও হুড়োহুড়িতে প্রাণ গেছে আরো ২ জনের। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উপত্যকাটিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলিদের পরিবর্তে জাতিসংঘের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের দাবি সাধারণ ফিলিস্তিনিদের। এদিকে, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনে ফিলিস্তিনি শিশুদের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মানসুর।

ত্রাণের বিনিময়ে ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে ইসরাইলি সেনারা। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার গাজা উপত্যকার মানুষ। প্রায় তিন মাস বন্ধ থাকার পর গাজায় ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সহায়তা বিতরণ শুরু করেছে মার্কিন সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন।

উপত্যকাটির বিভিন্ন পয়েন্টে খোলা হয়েছে তাদের গুদামঘর। যেখানে দীর্ঘদিন অনাহারে থাকা ফিলিস্তিনিদের উপচেপড়া ভিড়ই বলে দিচ্ছে এক টুকরো রুটির জন্য কতটা যুদ্ধ করতে হচ্ছে তাদের।

আর এই ভিড়ের মধ্যে ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি সেনারা। এতে নতুন করে প্রাণ গেছে বেশ কয়েকজনের। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। খাবার নিতে গিয়ে স্বজনের মৃত্যু, কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না অসহায় ফিলিস্তিনিরা। তবে ইসরাইলের এমন অমানবিক হামলার কারণে কঠিন জবাব দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে হামাস।

বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘সাহায্যকেন্দ্র থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে ছিল তারা। তাদের ওপর ড্রোন হামলা করেছে ইসরাইলি সেনারা।’

আরেকজন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা করার দরকার নেই। জাতিসংঘের ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর সহায়তায় ত্রাণ বিতরণ করা হোক।’

এদিকে গাজায় জাতিসংঘের একটি গুদামে হামলে পড়ে দুর্ভিক্ষের মুখে থাকা ফিলিস্তিনিরা। এসময় গুদাম ভেঙে সহায়তা নিতে গিয়ে হতাহত হন বেশ কয়েকজন।

এদিকে খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি সীমিত পরিসরে মেডিকেল সহায়তাও প্রবেশ করছে গাজায়। অপরদিকে উপত্যকাটির দক্ষিণাঞ্চলীয় কেরাম শালোম সীমান্তে একযোগে ত্রাণ ও ইসরাইলি মারণাস্ত্র প্রবেশ করছে। ঐ অঞ্চলের নিরাপত্তার নামে সমরাস্ত্র ও ট্যাংকারের মজুত বাড়াচ্ছে তেল আবিব।

গাজায় এ পর্যন্ত ৫ শ’ ত্রাণবাহী ট্রাক সহায়তা পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘ মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক। যেখানে এরইমধ্যে ২ শ’ ট্রাক খাদ্য সহায়তা বিতরণ করা হয়েছে।

জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক বলেন, ‘গেল সপ্তাহ থেকে এখন পর্যন্ত ৯ শ’ ট্রাক ত্রাণ প্রবেশে ইসরাইলের কাছে অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ৮ শ’ ট্রাক অনুমোদন পেয়েছে। ৫ শ’ ট্রাক ইসরাইলের কেরাম শালোম সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করেছে। আর কেবল ২ শ’ ট্রাক সহায়তার জন্য পেয়েছে কর্মীরা।’

গাজায় এই ত্রাণ সহায়তার মাধ্যমে হামাসের অর্থায়ন হয় বলে অভিযোগ ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর। তাই তেল আবিব এই ত্রাণ বিতরণের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলেও জানান তিনি।

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘গাজা উপত্যকায় ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব নিয়েছে তেল আবিব। এটা ছিল হামাসের অর্থায়নের প্রধান হাতিয়ার। তাই হামাস নির্মূলে খুবই কার্যকরী পদক্ষেপ এটি। হামাসকে শেষ করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।’

গাজায় ত্রাণ সহায়তা চালু করলেও থেমে নেই ফিলিস্তিনি হত্যা। মুহুর্মুহু গোলার শব্দে এখনও কেঁপে উঠছে গাজা ভূখণ্ড। আর এতে প্রতিদিনই নিহত হচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। যার বেশিরভাগই নারী ও শিশু। গাজার এমন নির্মমতার চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত।

জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মানসুর বলেন, ‘ইসরাইল মার্চ থেকে এ পর্যন্ত ১৩০০ শিশুকে হত্যা করেছে। ৪ হাজার শিশু আহত হয়েছে। বর্বরতার এ যুদ্ধ বন্ধ হোক। ক্ষুধার যন্ত্রণায় শিশুরা মারা যাচ্ছে। এ দৃশ্য মায়েদের সহ্য করার মতো না। আমারও নাতি-নাতনি আছে। পরিবারের কাছে কতটা আদরের তারা তা আমি অনুভর করতে পারি।’

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র বলছে গাজা সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধান জন্য কাজ করছে ওয়াশিংটন।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বলেন, ‘দ্রুতই গাজা ইস্যুতে নতুন পদক্ষেপ নেয়া হবে। বিষয়টি মার্কিন প্রেসিডেন্ট পর্যালোচনা করছেন। গাজা সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের পথে হাঁটছি আমরা। অবশ্যই ইতিবাচক কিছু হবে।’

এরমধ্যেই, ইসরাইলের তেল আবিবে অব্যাহত রয়েছে নেতানিয়াহু বিরোধী বিক্ষোভ। এসময়, জিম্মিদের মুক্ত করতে ব্যর্থতার অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবিও জানান তারা। যদিও, বিক্ষোভে থেমে থেমে চলে পুলিশের ধরপাকড়।

সেজু