যুদ্ধের পথে মোদি-শেহবাজ?

পাকিস্তান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী
পাকিস্তান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী | ছবি: সংগৃহীত
0

পেহেলগাম ইস্যুতে বর্তমান সংঘাত উত্তেজনা ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধে রূপ নেয় কি না, তা নিয়ে শঙ্কিত বিশ্লেষকরা। এর মধ্যে রাতের আধারে আক্রমণ চালানোয় ভারতকে কাপুরুষ বলার পর পাকিস্তানও বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাতে ভারতের ভূখণ্ডে আক্রমণ চালিয়েছে বলে দাবি করছে। যা নিয়ে জলঘোলা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, কাপুরুষ বলায় শেহবাজ শরীফকে নাকানি-চুবানি খাওয়াতেই কি তবে ‘যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা’ খেলছেন নরেন্দ্র মোদি?

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হতেই পাকিস্তান মুহুর্মুহু হামলা চালাচ্ছে দাবি করে ভিডিও প্রকাশ করতে থাকে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো। তখনও ভারতে পাল্টা আক্রমণের কোনো খবর উঠে আসেনি পাকিস্তানের শীর্ষ গণমাধ্যমে। 

ততক্ষণে ভারতের সেনাবাহিনীও দাবি করে, জম্মু-কাশ্মীরের তিনটি সামরিক স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র আর ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। নয়াদিল্লির এ অভিযোগ নাকচ করে দেয় ইসলামাবাদ।

এখন ভারত-পাকিস্তানের সংঘাত সমীকরণ রাত কেন্দ্রিক হয়ে ওঠায় বিশ্ববাসীর মনে ধোঁয়াশা তৈরি হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, রাতের আঁধারে আক্রমণ চালানোয় কাপুরুষ বলে আখ্যা দেয়ায় শেহবাজ শরীফকে নাকানি-চুবানি খাওয়াতেই কী তবে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা খেলেছে নরেন্দ্র মোদি? যার কারণে দুই পরাশক্তিধর দেশের সংঘাত উত্তেজনায় রাত হলেই তৈরি হয় থমথমে পরিস্থিতি। আতঙ্কে রাত পার করতে হয় বাসিন্দাদের।

বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘গত রাতেও প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ হয়েছে। আপনি দেখতে পাচ্ছেন, যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মানুষের ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে, দোকানপাট ধ্বংস হয়েছে। বেশ কয়েকজন মারাও গেছেন।’

আরেকজন বলেন, ‘আমরা এভাবে ভয়ানক পরিস্থিতিতে থাকতে চাই না। আমরা আতঙ্ক সৃষ্টিও করতে চাই না।’

আরো পড়ুন:

কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে ভারত পাকিস্তানে এ উত্তেজনা নতুন নয়। ১৯৪৭ সালের আগস্টে ভারত বিভাগের সময় থেকে চলমান বিরোধগুলোর মধ্যে অন্যতম কাশ্মীর। সবশেষ ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধের পর নরেন্দ্র মোদির আমলে ২০১৯ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতে জড়ায় ভারত।

যুদ্ধাবস্থা তৈরি হলে ভালোই ব্যাট চালিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ভারতীয় পাইলটকে আটক করা এবং পরবর্তীতে ফিরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে রাজনৈতিক জয় পাকিস্তানেরই হয়েছিল। পেহেলগাম ইস্যুতে বর্তমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতি পারমাণবিক যুদ্ধে রূপ নেয় কি না, তা নিয়ে শঙ্কিত বিশ্লেষকরা।

লন্ডনের কিংস কলেজের যুদ্ধ অধ্যায়ন বিভাগ সিনিয়র ফেলো আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, ‘যখনই কাশ্মীরে কোনো সংঘাত দেখা দেয়, তখন আমার মনে হয় দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা উচিত। প্রথমত তাদের উভয়েরই পারমাণবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা রয়েছে। উভয় দেশ কী এবার পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকে যাবে, এটি একটি বড় প্রশ্ন। যদিও তারা ১৯৪৭ এবং ১৯৬৫ সালে কাশ্মীর নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ করেছিল। এখন পারমাণবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থার কারণে তারা কতদূর যেতে পারে সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে। পারমাণবিক সংঘাত এবং পারমাণবিক বিপর্যয়ের ভয় সর্বদাই থাকে। এটা হৃদয়স্পর্শী সমস্যা।’

২০১৯ এর সংঘাতের পর উভয় দেশই নিজেদের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে মনযোগ দেয়। ফ্রান্সের কাছ থেকে বেশ কয়েকটি রাফাল যুদ্ধবিমান কিনে ভারত। পাকিস্তানও চীনের কাছ থেকে কিনে য়ে জে-টেন যুদ্ধবিমান। 

একে রাফালের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচনা করে চীন। পরে রাশিয়ার কাছ থেকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-ফোর হান্ড্রেড নেয় ভারত। এর পাল্টা জবাব হিসেবে পাকিস্তান আবার চীন থেকে কিনে ফেলেছে এইচকিউ-নাইন।

চলমান সংঘাতে প্রথম সারিতে আলোচনায় উঠে এসেছে এসব যুদ্ধাস্ত্র। চীন থেকে নেয়া আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে ইসরাইলের ড্রোন ও ফ্রান্সের রাফাল যুদ্ধবিমান নিয়ে চালানো ভারতের আক্রমণ সফলভাবে ঠেকানোর দাবি করছে পাকিস্তান। 

অন্যদিকে, ফ্রান্সের তৈরি রাফাল যুদ্ধবিমান দিয়ে পাকিস্তানের লক্ষ্যবস্তুতে সফলভাবে হামলার দাবি করছে ভারত। তেমনি রাশিয়ার তৈরি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-ফোর হান্ড্রেড দিয়ে বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের মিসাইল হামলা ঠেকানোর দাবি নয়াদিল্লির।

ইএ