মঙ্গলবার মধ্যরাত আর বুধবার ভোরের ঠিক মাঝখানের সময়টাতে যখন হামলা চালায় ভারত, সে সময় সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, চীনসহ বিভিন্ন দেশের ৫৭টি বাণিজ্যিক বিমান অবস্থান করছিল পাকিস্তানের আকাশসীমায়। ঝুঁকিতে ছিল কয়েক হাজার আরোহীর জীবন। কাশ্মীর সংকট তাই ভারত-পাকিস্তানকে ছাপিয়ে ভাবাচ্ছে বিশ্বনেতৃত্বে থাকা রাষ্ট্রগুলোকেও।
এতে অবশ্য চিরবৈরি দুই প্রতিবেশীর যুদ্ধের প্রস্তুতি থেমে নেই। ভারতের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের কমপক্ষে ২৫টি বেসামরিক বিমানবন্দর শনিবার পর্যন্ত অন্তত চার দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে ভারত সরকার। পাকিস্তানেও ইসলামাবাদ, করাচি, লাহোর ও শিয়ালকোট বিমানবন্দরে ফ্লাইটের ওঠানামা সাময়িক বন্ধ রয়েছে। রাডারে ধরা পড়েছে দুই দেশের আকাশসীমা এড়িয়ে বিমান চলাচলের দৃশ্য। ভোগান্তিতে লাখো আরোহী।
বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘আমি সমস্যায় পড়েছি কারণ বিমানবন্দরে আসার পর থেকেই দেখছি যে সব ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। পরিস্থিতি সত্যি খারাপ এবং এরপর কী হবে আমি জানি না।’
ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে ২২ এপ্রিলের সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ পর্যটককে হত্যার ঘটনায় পাকিস্তানকে তাৎক্ষণিক অভিযুক্ত করা নিয়ে নতুন করে উত্তপ্ত দুই দেশের কূটনীতি। এরপর নয়া দিল্লির বুধবারের প্রতিশোধমূলক হামলা পাকিস্তানে; এবার পাকিস্তানের পাল্টা হামলা আশঙ্কায় প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসলামাবাদও।
এরই মধ্যে উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখান্ড, পাঞ্জাব, রাজস্থান, গুজরাট, পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিমসহ বিভিন্ন রাজ্যকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সবমিলিয়ে আভাস সংঘাত দীর্ঘায়িত হওয়ারই। বিশ্লেষকরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে গিয়েই ভারত-পাকিস্তান সংকট বাড়াচ্ছে দুই দেশের সরকার। সর্বাত্মক যুদ্ধের আলামত না থাকলেও একেবারে উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না যুদ্ধের শঙ্কা।
জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক উদয় চন্দ্র বলেন, ‘পরিস্থিতির অবনতি ঠেকাতে এবং ইটের জবাবে পাটকেল ছোঁড়া বা বলতে পারেন যে মোরগলড়াই বন্ধে প্রচুর চাপ দেয়া হচ্ছে। ইদানিং তথাকথিত যে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক বা বিমান হামলা আমরা দেখছি, সেগুলো আসলে দেশের মানুষকে শান্ত রাখা এবং গণমাধ্যম ব্যবস্থাপনার কৌশল, সব অভ্যন্তরীণ শ্রোতাদের জন্য। কারণ যখন আবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিংবা কূটনীতিকরা কথা বলছেন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীনের সাথে, সে ভাষা কিন্তু আবার আলাদা। মনে হয় যেন একদমই আলাদা দু'টো বিষয়।’
যুদ্ধের শঙ্কায় থমথমে ভূস্বর্গ। বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞের মত, পাকিস্তানের পাল্টা আক্রমণ অবধারিত। এরপর শুরু হতে পারে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা। কিন্তু ২০০১-০২ সালের ভয়াবহ সংকটের পর এবারই সবচেয়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতির মুখে দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরাশক্তি। ফলে ২০১৬ বা ১৯ সালের মতো এবার আর অল্পের ওপর ফাঁড়া কাটবে, এমন আশা করতে পারছেন না অনেকেই।