কাশ্মীরে হামলায় গোয়েন্দা ব্যর্থতা, দায় এড়াতে পারছে না মোদি সরকার

কাশ্মিরে হামলা, দায় এড়াতে পারছে না মোদি সরকার
কাশ্মিরে হামলা, দায় এড়াতে পারছে না মোদি সরকার | ছবি: সংগৃহীত
0

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলাকে সন্ত্রাসী হামলার তকমা দেয়া হলেও দায় এড়াতে পারছে না ক্ষমতাসীন মোদি সরকার। ভারতীয় সেনাদের নখদর্পণে থাকা পেহেলগামের মতো জায়গায় কীভাবে অস্ত্রধারীরা এ ধরনের হামলা চালাতে সক্ষম হলো, মিলছে না সে প্রশ্নের যথাযথ উত্তর। সম্ভাব্য ঝুঁকি প্রশমনে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতাও স্পষ্ট। এদিকে, এই হামলার কারণে ওয়াক্ফ ইস্যুতে সাম্প্রদায়িক বিভাজন আরো বাড়তে পারে এমন আশঙ্কাও করছে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম।

২০১৯ এ পুলওয়ামা হামলার পর এই প্রথম এমন নৃশংসতার সাক্ষী হল কাশ্মীরবাসী। ২০০৯ সালে তীর্থযাত্রীদের বহনকারী বাসে হামলায় ৯ পুণ্যার্থী নিহত হলেও পর্যটকদের বেছে বেছে হত্যা করার সাম্প্রতিক নজির নেই ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে।

বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় গরমকালে ভূস্বর্গ কাশ্মীরে পর্যটকদের আনাগোনা বেশি থাকে। ভারতীয় গণমাধ্যমের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সংখ্যা ছিল প্রায় আড়াই কোটি। ২০২৩ সালেও এই সংখ্যা ছিল ২ কোটির বেশি। নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা পেহেলগামে, গুলমার্গ ও শোনমার্গের মতো পর্যটকপ্রিয় এলাকায় এমন একটি ভয়াবহ হামলায় স্বভাবতই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় দায় এড়াতে পারছে না কেন্দ্রীয় সরকারও।

এরই মধ্যে কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলায় দায় স্বীকার করেছে দ্য রেজিস্ট্যান্স ফোর্স-টিআরএফ। নিষিদ্ধ লস্কর-ই-তৈয়্যবার ছায়া সংগঠন এটি। একাধিক ভারতীয় গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, হত্যার আগে জানতে চাওয়া হয়েছিল পর্যটকদের ধর্মীয় পরিচয়। ছাড় দেয়া হয়েছে নারীদের। সন্ত্রাসী হামলার এই লক্ষণগুলোও নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠছে নানা মহলে।

আরো পড়ুন:

হামলার পর জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানান, এই হামলায় তিনি যতটা শোকাহত তার চেয়েও বেশি অবাক হয়েছেন। ঘটনার পরপরই দিল্লিতে নিজ বাসভবনে নিরাপত্তাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এই দু'টি ঘটনা থেকে এটি স্পষ্ট, পেহেলগামে হামলা সম্পর্কে কোনো আভাস বা ইনটেল ছিল না ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার।

পেহেলগাম হামলার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে কাশ্মীরে। কোনো কোনো গণমাধ্যমে এই হামলার জন্য পরোক্ষভাবে দায়ী করা হচ্ছে পাকিস্তানকেও। কিন্তু ভরা পর্যটন মৌসুমে পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায়, সে দায় এড়াতে পারেনা কেন্দ্র সরকার।

গত বেশ কিছুদিন ধরেই মুসলিম মালিকানাধীন ওয়াক্ফ সম্পদ ইস্যুতে উত্তাল ভারত। ওয়াক্ফ আইন সংশোধন, মসজিদ গুড়িয়ে দেয়া, অমুসলিমদের ওয়াক্ফ বোর্ডে নিয়োগসহ নানা বিষয়ে সৃষ্টি হয়েছে বিভাজন। ভারতীয় গণমাধ্যমের আশঙ্কা, পর্যটকদের ওপর এই হামলার জেরে চলমান এই দ্বন্দ্ব আরও তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। বিশেষ করে গেরুয়া শিবির এই হামলার পর ওয়াক্ফ নিয়ে আরও বেশি তৎপর হয়ে উঠবে এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।

ভারতীয় গণমাধ্যমে আরও বলা হচ্ছে, এমন সময় কাশ্মীরে হামলা হল যখন নরেন্দ্র মোদি সৌদি আরব সফরে আর মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স ভারতে অবস্থান করছেন। হামলার কারণে সৌদি আরবে আনুষ্ঠানিক নৈশ্যভোজ বাতিল করে তড়িঘড়ি করে দেশে ফিরেছেন মোদি। টেলিফোনে নরেন্দ্র মোদির সাথে কথাও বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কোনো কোনো সূত্র বলছে, পেহেলগাম হামলার সময় ঘটনাস্থলে ২ ইউরোপীয়সহ মোট ৪ জন বিদেশি পর্যটক ছিলেন। ফলে এই হামলার ভূরাজনৈতিক দিকও অবহেলা করার সুযোগ নেই।

ইএ