রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার মধ্যে এবার ইউক্রেনে বড় ধরণের এ হামলা করলো রাশিয়া। ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বের শহর 'সুমি'তে পর পর দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ে রুশ সেনারা। মুহূর্তেই মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় গোটা শহর। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায় ঝলসানো সব মরদেহ। লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় সাজানো শহর সুমি।
রাশিয়ার এ হামলার সময় খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সপ্তাহের প্রথম দিন পাম সানডে উৎযাপন করছিলেন ইউক্রেনীয়রা। তাই কোন ধরণের সামরিক ক্যাম্প না থাকার পরও এই অঞ্চলে তাদের এই হামলাকে গণহত্যা বলে দাবি করছেন ইউক্রেনের সাধারণ মানুষ।
এক অধিবাসী বলেন, ‘উঠে পাম সানডেতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। দুর্ভাগ্যবশত আমরা সেখানে না গিয়ে এখন হাসপাতালে যাচ্ছি।’
আরেক অধিবাসী বলেন, ‘এখনকার চার তলায় আমার অ্যাপার্টমেন্ট। তীব্র বিস্ফোরণের শব্দে চারদিক কেঁপে উঠে। কী করবো বুঝতে পারছিলাম না। এখন ঠিক লাগছে কিছুটা।’
অন্য এক অধিবাসী বলেন, ‘সিটি সেন্টারে থাকি আমি। সেখানে কোন সেনা সদস্যদের ক্যাম্প হবে। রাশিয়ার এ হামলা গণহত্যা।’
যুদ্ধ বন্ধে কোন ধরণের চাপ না দেয়ায় রাশিয়া ইউক্রেন ভূ-খণ্ড মিসাইল ফেলতে সাহস পেয়েছে বলে অভিযোগ ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মস্কোর বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান তার।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘অপরাধীদের যখন প্রচণ্ড চাপে ফেলা যায়, তবেই কেবল যুদ্ধ বন্ধ হয়। এছাড়া যুদ্ধ বন্ধ সম্ভব নয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব রাশিয়া ফিরিয়ে দিয়েছে এক মাস হয়ে গেলো। পুতিনের মনে কোন ভয় নেই। তাই তারা ইউক্রেনে মিসাইল ছুঁড়েছে। প্রতিরাতে শত শত রুশ ড্রোন ইউক্রেনের আকাশে উড়ে।’
ইউক্রেনে রাশিয়া হামলার সাফাই গাইলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রাশিয়া ভুলে ইউক্রেনে মিসাইল হামলা করেছে বলে দাবি তার।
তিনি বলেন, ‘খুবই ভয়াবহ ব্যাপার ঘটেছে। রাশিয়া ভুল করেছে। পুরো যুদ্ধই আসলে ভয়ানক। ক্ষমতার অপব্যবহার করতেই এ যুদ্ধ শুরু হয়েছিলো। আমি প্রেসিডেন্ট থাকলে কখনই এ যুদ্ধ শুরু হতো না।’
রাশিয়ার এ হামলার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা। একে বর্বর হামলা বলছে ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরজুলা ভন দেইর লায়েন। সামাজিক যোগাযোগ মধ্যমে ইউক্রেনের প্রতি সংহতি জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শল শলৎজ।
এদিকে ইউক্রেনের আবাসিক এলাকায় হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেছে মস্কো। তবে পরিস্থিতি যাই হোক যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভালো সম্পর্কের দিকে এগোচ্ছে মস্কো। এমনটাই দাবি ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিবিত্রি পেশকভের।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ বলেন, সব কিছু ভালো ভাবেই যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বর্তমান সম্পর্ককে অন্য মাত্রায় নিয়ে যেতে কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে। পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের মাধ্যমে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছি।’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি কার্যকরে যখন মধ্যস্থতায় কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র তখন হঠাৎ করে ইউক্রেনে রুশ মিসাইল হামলা অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিতে পারে তাদের এ প্রচেষ্টা।