যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুযায়ী গেল শনিবার ৬ জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। বিনিময়ে ৬২০ ফিলিস্তিনি কারাবন্দিকে ফেরত দেয়ার কথা থাকলেও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে ইসরাইল। এতে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ বাস্তবায়ন হবে কী না, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।
অবশেষে কারাবন্দিদের মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে ইসরাইল। তবে ৪ জিম্মির মরদেহ ফেরত দিতে হামাসকে শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে হামাস। মধ্যস্ততাকারীদের ধারণা, বুধবার নাগাদ কারাবন্দি ও জিম্মিদের মরদেহ বিনিময় হতে পারে। যুদ্ধবিরতি অব্যাহত রাখতে জাতিসংঘে ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মুক্তিপ্রাপ্ত এক জিম্মি। অপরদিকে ফিলিস্তিনিদের ওপর আগ্রাসনকে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদের সঙ্গে তুলনা করেছেন চুক্তি বিষয়ক ইসরাইলের সাবেক মধ্যস্থতাকারী।
ইউএস মিডলইস্ট প্রজেক্টের প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল লেভি বলেন, ‘বিবদমান কোনো পক্ষই নিজেদের বিলুপ্তির বিষয়ে আলোচনা করবে না, যতক্ষণ না কোনো পক্ষ যুদ্ধক্ষেত্রে ধ্বংস হচ্ছে কিংবা সংঘাতের মূল কারণ নিরূপণ সম্ভব হচ্ছে। হামাস পরাজিত হয়নি। যতক্ষণ ফিলিস্তিনিদের ওপর সহিংসতা, আগ্রাসন ও বর্ণবাদ বন্ধ হচ্ছে না, ততদিন হামাসের প্রতিরোধ আন্দোলন চলবে।’
মুক্তিপ্রাপ্ত ইসরাইলি জিম্মি নোয়া আরগামানি বলেন, ‘পুরো বিশ্বকে জানাতে চাই, যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতিটি ধাপ বাস্তবায়ন হওয়া জরুরি। আমার সঙ্গী আভিনাথান কিংবা বাকি জিম্মিদের দ্বিতীয় ধাপে ছাড়া পাবার কথা রয়েছে।’
এদিকে, ঠান্ডা ও বৃষ্টির কারণে গাজায় তীব্র হচ্ছে মানবিক সংকট। হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছে বেশ কয়েকটি শিশু। চুক্তি অনুযায়ী ৬০ হাজার ভ্রাম্যমাণ ঘর ও ২ লাখ তাঁবু সরবরাহের কথা থাকলেও তার ভগ্নাংশই পাঠিয়েছে ইসরাইল। তারপরও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে গাজাবাসী।
ইসরাইলি হামলায় ধ্বংস হয়েছে উপত্যকার ৯০ শতাংশ স্কুল। বাকি ১০ শতাংশে শুরু হয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। ১৬ মাস পর ক্লাসে ফিরতে পেরে অনেক শিশুই আনন্দে উৎফুল্ল ছিল। যদিও শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ সবার কণ্ঠেই ছিল পুনরায় যুদ্ধ শুরুর শঙ্কা।
ফিলিস্তিনিদের একজন বলেন, ‘দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে আমরা স্কুলে ফিরেছি। পড়াশোনা শেষ করে বিশ্বের সেরা ডাক্তার হতে চাই।’
আরেকজন বলেন, ‘আমার সন্তানরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রুটি সংগ্রহ করতে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতো। আশা করি এখন তারা সুশৃঙ্খল জীবনে ফিরবে।’
গাজায় কিছুটা শান্তি ফিরলেও এখনও উত্তপ্ত পশ্চিম তীর। যুদ্ধবিরতির পর থেকে অপারেশন আয়রন ওয়ালের কারণে অঞ্চলটিতে প্রাণ হারিয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ। আগ্রাসন থেকে বাদ যাচ্ছে না স্বাস্থ্যকেন্দ্র। যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ফিলিস্তিনিরা ইতিহাসের সবচেয়ে বিপজ্জনক ধাপ পার করছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ফিলিস্তিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারসেন আগহাবেকিয়ান বলেন, ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বিপজ্জনক ধাপ পার করছে ফিলিস্তিনিরা। ৫৮ বছরে কখনো এমন মানবতাবিরোধী অপরাধের সম্মুখীন হইনি। গাজার পর ইসরাইলিদের পরবর্তী টার্গেট পশ্চিম তীর। আপনারা আমাদের পাশে দাঁড়ান। না হলে বিবেকের দংশনে আপনাদের বাকি জীবন কাটাতে হবে।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্মকর্তা রিক পিপারকর্ন বলেন, ‘পশ্চিম তীরের পরিস্থিতি নিয়ে আমরা ভীষণ উদ্বিগ্ন। এমন অভিযানে স্বাস্থ্যখাতে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। পহেলা জানুয়ারি থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।’
পশ্চিমতীরের অধিবাসীদের শঙ্কা, গাজার মতো অঞ্চলটি থেকে ফিলিস্তিনিদের নির্মূলের চেষ্টা করছে ইসরাইল। দুই দশক পর পশ্চিমতীরে ট্যাংক মোতায়েন সেই শঙ্কাকে আরো বাড়িয়ে তুলছে।