কোনো বাধাই যেনো আটকাতে পারছে না ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে। নানা বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও একের পর এক পদক্ষেপ বাস্তবায়নে সফলতার মুখ দেখছেন তিনি। অভিবাসন নীতি, শুল্কারোপ, পররাষ্ট্রনীতি, মন্ত্রিসভা গঠন, সরকারি কাঠামোর সংস্কার এমনকি সংবিধান নিয়ে টানাটানি করতেও পিছপা হচ্ছেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্পের করনীতি ও সীমান্ত নিরাপত্তা এজেন্ডা নিয়ে ভোটাভুটি হয়। কয়েক মুহূর্ত আগেও যা ছিল ব্যর্থতার মুখে। অবশেষে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ২১৭-২১৫ ভোটে প্রস্তাবটি পাস হয়। মাত্র একজন রিপাবলিকান প্রতিনিধি বিপক্ষে ভোট দেন। এটিকে চলতি বছরের বাজেট পাসের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বড় জয় হিসেবে দেখছেন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসন বলেন, ‘আমাদের সামনে আরও অনেক কঠিন কাজ পড়ে আছে। তবে এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তৈরি করা এজেন্ডার প্রথম ধাপ বাস্তবায়নের পথে আছি। পুরো এজেন্ডা বাস্তবায়ন আমাদের পরিকল্পনায় আছে, কেবল আংশিক নয়। প্রতিনিধি পরিষদে প্রথম ধাপ পার হয়েছে।’
এবার বিদেশিদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব বিক্রির পরিকল্পনা নিয়েছেন ট্রাম্প। ৫০ লাখ ডলারের বিনিময়ে মিলবে গোল্ড কার্ড। যা গ্রিন কার্ডের আধুনিক সংস্করণ। এর মাধ্যমে অভিবাসী ও অন্য দেশের নাগরিকরা যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই চালু হবে এই প্রক্রিয়া। ট্রাম্প জানান, এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে করের আওতা বাড়বে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং জাতীয় ঋণ পরিশোধে সহায়ক হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘১০ লাখ বা এর বেশি গোল্ড কার্ড বিক্রির পরিকল্পনা আছে আমাদের। বিক্রির অর্থ যোগ করলে বড় একটি সংখ্যা দাঁড়াবে। উদাহরণস্বরূপ, একটি কার্ড ৫০ লাখ ডলার হলে ১০ লাখে পাওয়া যাবে ৫ লাখ কোটি ডলার। আর যদি ১ কোটি কার্ড বিক্রি হয় তাহলে আসবে ৫০ লাখ কোটি ডলার। যা আমাদের সাড়ে ৩ লাখ ডলার ঋণ পূরণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এটি দারুণ একটি পরিকল্পনা।’
মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক জানিয়েছেন, গোল্ড কার্ড চালু হলে বিদ্যমান ইবি-ফাইভ ভিসা প্রোগ্রাম বাতিল হতে পারে। যার মাধ্যমে মার্কিন ব্যবসায় বিনিয়োগের মাধ্যমে বিদেশিদের গ্রিন কার্ড দেয়া হতো। যদিও গ্রিন কার্ডের সুবিধাগুলো গোল্ড কার্ডেও বিদ্যমান থাকবে। তবে এ বিষয়ে এখনো বিস্তারিত জানায়নি ট্রাম্প প্রশাসন।
নিত্যনতুন পদক্ষেপের সঙ্গে প্রতিশোধও নিচ্ছেন ট্রাম্প। ২০২০ সালে নির্বাচনের ফল উল্টে দেয়ার মামলার বিশেষ কৌঁসুলি জ্যাক স্মিথ সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বলেছেন, ট্রাম্প পুনঃনির্বাচিত না হলে দোষী সাব্যস্ত হতেন। এরপরই মঙ্গলবার এক নির্বাহী আদেশে আইনজীবী জ্যাক স্মিথ ও তার সঙ্গে কাজ করা আইনজীবীদের নিরাপত্তা ছাড়পত্র স্থগিত করেন ট্রাম্প। এছাড়া, স্বাস্থ্যসেবা খরচের ওপর স্বচ্ছতা আনতে আরেকটি নির্বাহী আদেশে সই করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের অংশ না হয়েও একের পর এক বিতর্কিত পদক্ষেপ নিচ্ছেন ট্রাম্পের উপদেষ্টা ইলন মাস্ক। সরকারি দক্ষতা বিভাগের প্রধান হয়ে এরই মধ্যে কয়েক হাজার কর্মীকে ছাঁটাই করেছেন তিনি। এবার ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে ইলন মাস্ক উপস্থিত থাকবেন বলে নিশ্চিত করেছে হোয়াইট হাউজ।
হোয়াইট হাউস প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, 'প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে ইলন মাস্কের উপস্থিত থাকার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ট্রাম্প এবং তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে উপদেষ্টা হিসেবে ইলন মাস্কও উপস্থিত থাকবেন। মন্ত্রিসভার সদস্যরা নিজ নিজ সংস্থায় অপচয়, জালিয়াতি ও অপব্যবহার রোধে কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন, সে বিষয়ে সরকারে দক্ষতা বিভাগের সঙ্গে আলোচনা হবে।'
এদিকে, এবার তামা শিল্পের ওপর শুল্কারোপের ঘোষণা দিয়ে বৈশ্বিক বাণিজ্য নীতির ওপর আরেকটি আঘাত করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তামা শিল্পকে পুনরুদ্ধারের জন্য এ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। নতুন মার্কিন শুল্কারোপে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তামার শীর্ষ সরবরাহকারী দেশ চিলি, কানাডা, পেরু ও মেক্সিকো।