তেলেঙ্গানায় সুড়ঙ্গ ধসে আটকেপড়া শ্রমিক উদ্ধারে 'র‌্যাট মাইনিং' শুরু

0

নির্মাণাধীন সুড়ঙ্গ ধসে পড়ে ভারতের তেলেঙ্গানায় তিনদিন ধরে আটকে আছেন আট শ্রমিক। সশস্ত্র বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় উদ্ধার তৎপরতা চললেও দুর্ঘটনার তিনদিন পরও ভেতরে আটকেপড়া শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হয়নি। তাদের জীবিত উদ্ধারের আশা ফিকে হতে থাকায় শেষ চেষ্টা হিসেবে বিতর্কিত 'র‌্যাট মাইনিং' শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ।

ভারতের দক্ষিণে তেলেঙ্গানা রাজ্যে দুই দশক ধরে চলছিল বিশ্বের সবচেয়ে সেচ সুড়ঙ্গ নির্মাণের কাজ। ২০০৫ সালে নির্মাণকাজ শুরু হলেও বারবার বিলম্বে কচ্ছপ গতিতে এগিয়েছে স্রিসাইলাম লেফট ব্যাংক প্রকল্প। তিনদিন আগে সুড়ঙ্গ ধসে আবারও থমকে গেছে প্রকল্পের কাজ।

শনিবার সকালে যখন ধসে পড়ে আংশিক সুড়ঙ্গ, তখন সেখানে মাটির নিচে প্রবেশপথ থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার ভেতরে কাজ করছিলেন বেশ ক'জন শ্রমিক। অনেকে কোনোভাবে বের হয়ে আসতে পারলেও ধ্বংসস্তূপের ভেতরে আটকা পড়েন আট শ্রমিক।

ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাদেরকে উদ্ধারের চেষ্টা চললেও, দুর্ঘটনার তিনদিন পেরিয়ে গেলেও তাদের একজনের সঙ্গেও যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেননি উদ্ধারকর্মীরা। ১০ মিটারের বেশি ব্যাসের সুড়ঙ্গটির ছাদ ভেঙে পড়ায় এবং তীব্র গতিতে পানি ঢুকে যাওয়ায় তিনদিন পরও শ্রমিকদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ধসেপড়া সুড়ঙ্গে প্রবেশ এতোটাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, শেষ পর্যন্ত শ্রমিকদের বাঁচাতে বিতর্কিত র‌্যাট মাইনিং পদ্ধতি বেছে নিয়েছে প্রশাসন।

স্থানীয় একজন বলেন, ‘সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো বহমান পানি, কারণ সুড়ঙ্গটি কিছুদূর পর্যন্ত সোজা গেলেও এরপরই ঢালু হয়ে গেছে। এখানে স্থানীয় শ্রমিক যারা কাজ করে, তাদের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি যে পাঁচ মিটার দূরেই একটি ঢাল আছে। ১২০ মিটার খননযন্ত্রের ওপর সুড়ঙ্গ ধসে পড়ার পর যন্ত্রটি পেছন দিকে সরে যায়। যন্ত্রটির ভাঙা অংশ প্রায় ৮০ মিটার পেছনে গিয়ে আটকে আছে। এখানেই পুরো কাজটি বেশ জটিল ও গুরুতর হয়ে গেছে।’

ভারত তেলেঙ্গানা নগরকুরনুল জেলা প্রশাসক বাড়াভাথ সন্তোষ বলেন, ‘গতকাল একটি দল ভেতরে ঢুকেছে। এরপর তারা কিছু পরামর্শ দিয়েছে। যেমন পানি সরিয়ে নেয়ার গতি বাড়াতে হবে। এজন্য অতিরিক্ত কিছু পাম্প বসিয়েছি আমরা। পানি সরানোর কাজ চলছে। এখন সেনাবাহিনীর একটি দলও এসেছে।’

উদ্ধারকাজে সহযোগিতার জন্য সোমবার ঘটনাস্থলে পৌঁছায় র‌্যাট মাইনারদের একটি দল। র‌্যাট হোল বা ইঁদুরের গর্তের আদলে নিষ্কাশন শ্রমিকদের হাত দিয়ে মাটির গভীরে সরু গর্ত খোঁড়াকে বলা হয় র‌্যাট মাইনিং। যারা এ কাজ করেন, তাদের বলা হয় র‌্যাট মাইনার। ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মেঘালয়ে কয়লা উত্তোলনে প্রচলিত এ ধরনের খনন পদ্ধতি অত্যন্ত বিপজ্জনক। পরিবেশগত বিপর্যয় এবং প্রচুর প্রাণহানির কারণে ২০১৪ সালে আদালতের নির্দেশে নিষিদ্ধ হয় র‌্যাট মাইনিং। তা সত্ত্বেও শ্রমিকদের জীবিত উদ্ধারের শেষ প্রচেষ্টা হিসেবে নিষিদ্ধ এ পদ্ধতিরই দ্বারস্থ হয়েছে কর্তৃপক্ষ।

মনিটরের সাহায্যে দেখতে পারি আমরা, সবাইকে দেখাতে পারি। কীভাবে ক্যামেরা কাজ করে সে বিষয়ে বলা যায়, কোনোকিছুর মাধ্যমে ক্যামেরা ভেতরে ঢোকাতে হয়। এরপর ক্যামেরা দিয়ে ভেতরে যাই থাকুক না কেন, তা শনাক্ত করা সম্ভব হয়। উত্তরাখান্ড অভিযানেও একভাবে কাজ করেছিলাম আমরা। সেজন্যই এখানে আমাদের ডাকা হয়েছে। এখানকার পরিস্থিতি এখনো জানি না, ভবিষ্যৎও জানি না। ঢুকলেও বোঝা যাবে পরিস্থিতি কী।

২০২৩ সালে উত্তরাখান্ডে সিল্কইয়ারা বেন্ড-বারকোট সুড়ঙ্গ ধসে পড়ার ১৭ দিন পর, র‌্যাট মাইনিং পদ্ধতিতে ৪১ শ্রমিককে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিল তেলেঙ্গানার উদ্ধারকাজে যোগ দেয়া র‌্যাট মাইনারদের দলটি।

এএম