রণক্ষেত্র থেকে পালাচ্ছে উত্তর কোরীয় সেনারা, দাবি দ. কোরিয়ার

.
বিদেশে এখন
0

রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসে রণক্ষেত্র থেকে পালাচ্ছে উত্তর কোরীয় সেনারা। যদিও ইউক্রেন নয়, প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের সৈন্যদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এনে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে উত্তর কোরিয়ার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা বিভাগ। অন্যদিকে, ইউক্রেনের দাবি, আটককৃত উত্তর কোরিয়ার সেনাদের অনেকে জানেনই না কোন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছেন তারা।

গেল মঙ্গলবার চাঞ্চল্যকর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা বিভাগ ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস বা এনআইএস। সেখানে বলা হচ্ছে, রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে উত্তর কোরিয়ার যে সব সেনাদের পাঠানো হয়েছিল তাদের কোনো চিহ্নই পাওয়া যাচ্ছে না।

গেল অগাস্টে কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের সাফল্যের পর ডিসেম্বরে সেখানে রাশিয়ার হয়ে লড়াই করতে ১১ হাজার উত্তর কোরীয় সেনা পাঠান প্রেসিডেন্ট কিম। কিন্তু নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন বলছে, এই সেনাদল যখন কুরস্ক থেকে ফিরে আসতে শুরু করে তাদের অনেকেই নিহত বা আটক হয়। আর, বাকিরা বিভিন্নস্থানে পালিয়েছে এমন দাবিও করা হয় ঐ প্রতিবেদনে। ফলে, দক্ষিণ কোরীয় গোয়েন্দা বিভাগের তথ্য উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই বলে দাবি করছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা।

গেল সপ্তাহে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত আত্মঘাতী যুদ্ধনীতিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে উত্তর কোরিয়ার সেনারা। ধরা পড়ার সম্ভাবনা থাকলে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন উত্তর কোরীয় সেনাদের এমন সুইসাইড নোটও উদ্ধার করে জেলেনস্কি বাহিনী।

আবার, ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর কমান্ডারদের মধ্যেও কেউ কেউ দাবি করছেন, ধরা পড়লে আত্মহত্যা ছাড়া উপায় নেই বলে, রণক্ষেত্র থেকে পালাচ্ছে উত্তর কোরিয়ার সেনারা। আটককৃত উত্তর কোরীয় সেনাদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিওতে দেখা গেছে, ধরা পড়া অনেক সেনাই জানতেন না তাদের ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাঠানো হচ্ছে। কেউ কেউ ভেবেছিলেন, ফার্স্টহ্যান্ড যুদ্ধের অভিজ্ঞতা অর্জনের কোনো মিশন বা ট্রেনিং এ এসেছেন তারা।

একজনকে জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনি কী জানেন আপনি এখন কোথায়? আপনি এখন ইউক্রেনে। আপনি কী জানতেন ইউক্রেনীয় সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আপনাদের পাঠানো হয়েছে? কমান্ডার যখন যুদ্ধে যাওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন তখন কিছু বলে দেন নি? তারা বলেছিল আমরা ট্রেনিং এ যাচ্ছি। আপনার পরিবারের সদস্যরা কী জানে আপনি কোথায়?

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা দপ্তর বলছে, গেল জানুয়ারিতে রুশ ভূখণ্ডে সামরিক ও বেসামরিক মিলিয়ে প্রাণহানির সংখ্যা ৪৮ হাজার ছাড়িয়েছে। তিন বছর ধরে চলমান যুদ্ধের হিসাবে যা একমাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

সংঘাত শুরুর পর গেল ৩ বছরে ৩ লাখেরও বেশি রুশ সেনা হতাহতের খবর নিশ্চিত করেছে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর। তবে গেল আগস্ট থেকে এই সংখ্যা বাড়ছে বলে দাবি ইউক্রেনের। রয়টার্স বলছে, এই পরিসংখ্যান থেকে ধারণ করা যায়, সেনা সক্ষমতার বিচারে কিছুটা ব্যাকফুটে মস্কো।

এমন প্রতিবেদন প্রকাশের প্রশ্ন উঠছে, উত্তর কোরিয়ার সে সব সেনারা রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করতে এসেছেন, তারা কী আদৌ জানেন কী না তাদের প্রতিপক্ষ কে বা কারা। ফলে, ক্যারিয়ারের উন্নতির প্রলোভন দেখিয়ে উত্তর কোরীয় প্রেসিডেন্ট কিম জং উন, তার সেনাদের পুতিন বাহিনীর পাশে থাকাতে বাধ্য করেছেন-এমন ধারণাও উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই।

এএইচ