এজিয়ান সাগর তীরবর্তী গ্রিসের সান্তোরিনি। চোখজুড়োনো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য সারা বিশ্বে সুপরিচিত দ্বীপটির খ্যাতি রয়েছে 'ইনস্টাগ্রাম ভিলেজ' হিসেবে।
১৬শ' শতকে একবার ধ্বংসাত্মক আগ্নেয়গিরির লাভায় পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছিল সান্তোরিনি, যে দুর্যোগে স্থায়ীভাবে পাল্টে যায় দ্বীপটির ভৌগোলিক চিত্র। ৫শ' বছর পর আবারও কি তেমনই এক দুর্যোগের পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে সান্তোরিনিতে?
ভূমধ্যসাগরের কেন্দ্রে অবস্থিত সান্তোরিনি অঞ্চলটির অন্যতম আগ্নেয় দ্বীপ যা সুপ্ত আছে ১৯৫০ সালের পর থেকে। প্রায় সপ্তাহ খানেক ধরে টানা কম্পনের জেরে আতঙ্কিত হয়ে বিদেশি পর্যটকরা সান্তোরিনি তো ছাড়ছেনই, নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন স্থানীয়রাও। গেলো দু'দিনে অন্তত ৩শটি কম্পনে এরইমধ্যে খালি হয়ে গেছে বছর জুড়ে পর্যটকে ঠাসা সান্তোরিনির রাস্তাঘাট।
এক অধিবাসী জানান, ১০ মিনিট পরপর কেঁপে উঠছে আমাদের সান্তোরিনি। অনেক অনেক ভূমিকম্প হচ্ছে। আমরা উদ্বিগ্ন।
আরেকজন জানান, যখন আপনি ভূমিকম্পের উৎসস্থলে আছেন এবং জানেন যে আপনি আসলে একটি আগ্নেয় দ্বীপে অবস্থান করছেন, যার ভূমি ভঙ্গুর, তখন আতঙ্ক সীমা ছাড়ায়।
এখন পর্যন্ত কম্পন মৃদু হলেও সান্তোরিনির পাশাপাশি কেপে উঠছে আশপাশের আরও অনেক দ্বীপ। এই কম্পন শক্তিশালী কোনো ভূমিকম্পের আভাস বলে শঙ্কিত মানুষ। আর বড় ভূমিকম্প হলে তার সাথে সুনামি কিংবা আগ্নেয়গিরি সক্রিয় হয়ে উঠলে বিপর্যয় সীমা ছাড়াবে, এমন আতঙ্কও ভর করছে সবার মধ্যে।
পূর্বসতর্কতা হিসেবে তাই এরইমধ্যে সান্তোরিনি ছেড়ে মূল ভূখণ্ডে চলে গেছেন ছয় হাজার পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দা। যদিও অনেকে আবার নিজের জন্মভূমি ছাড়তে নারাজ।
আরেক অধিবাসী বলেন, আমরা চলে যাচ্ছি কারণ ভয় পাচ্ছি। যেভাবে সমানে ভূমিকম্প হয়েই যাচ্ছে, বাচ্চাদের জন্য হলেও আমাদের যেতে হবে। বাচ্চাদের শান্ত রাখতে হবে।
ভূগর্ভস্থ ইউরেশিয়ান টেকটনিক প্লেটের ছোট অংশ এজিয়ান সি প্লেটের শীর্ষে অবস্থিত সান্তোরিনি। নিকটবর্তী আফ্রিকান টেকটনিক প্লেট থেকে ক্রমশ দূরে সরছে এজিয়ান সি প্লেট। এই দুই প্লেটের সংঘর্ষের কারণে ইউরোপের অন্যতম প্রধান ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চল গ্রিক দ্বীপপুঞ্জ। ভূতাত্ত্বিকদের তথ্য, সাম্প্রতিক এই ভূমিকম্পের শুরু আরও প্রায় আট মাস আগে।
এ সময়ে অঞ্চলটিতে ২৩শ'র বেশি কম্পন রেকর্ড করা হয়, যার মধ্যে প্রায় অর্ধশত কম্পনের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে চার থেকে পাঁচ। পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে কি না, তা এখনও অনুমান করতে পারছেন না ভূতাত্ত্বিকরা। তবে এ কম্পন চলতে থাকবে ধরে নিয়ে নানা ব্যবস্থা নিচ্ছে প্রশাসন।
গ্রিসের সান্তোরিনির মেয়র নিকোস জোরজোস, ‘ধৈর্য্যের সাথে শান্ত হয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে আমাদের। এই ভূকম্পন কয়েক সপ্তাহ ধরে চলতে পারে।’
বড় ভূমিকম্পের শঙ্কায় সান্তোরিনি ও আশপাশের দ্বীপগুলোর সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে অন্তত এক সপ্তাহের জন্য। বদ্ধ স্থানে সামাজিক অনুষ্ঠান বাতিল ও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দ্রুত দ্বীপ ছাড়তে চাওয়া মানুষের ভিড়ে বাড়ানো হয়েছে ফেরি ও ফ্লাইটের সংখ্যা।