সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল–আসাদের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়া। বিশেষ করে ২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে দামেস্ক–মস্কো সম্পর্ক আরও জোরদার হয়। ২০১৫ সালে রাশিয়ার বিমান হামলায় বিদ্রোহীদের হটিয়ে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করে আসাদ প্রশাসন। সিরিয়ার মাটিতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি আছে রাশিয়ার। ৯ বছরে দেশটির ভূখণ্ডে রুশ হামলায় প্রাণ গেছে ২১ হাজারের বেশি মানুষের।
মস্কো জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট পুতিনের সিদ্ধান্তেই আসাদের পরিবারকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়া হয়েছে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের তথ্য, আসাদের স্বজনদের অন্তত ১৮টি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট আছে রাশিয়ায়। কেবল গৃহযুদ্ধের সময়ই মস্কোতে কোটি কোটি ডলার পাচার করেছে তিনি। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আসাদ পরিবারের মোট সম্পদ প্রায় ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের। তবে প্রকৃত অর্থ আরও বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আসাদের তিন সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে হাফিজ মস্কোতে পিএইচডি করছেন। আসাদের স্ত্রী আসমা আসাদ যুক্তরাজ্য ও সিরিয়ার যৌথ নাগরিক। তার পড়াশোনা ও বেড়ে উঠা লন্ডনে। ২০০০ সালে পাকাপাকিভাবে সিরিয়ায় ফিরে এসে বিয়ে করেন আসাদকে। আসমার মা-বাবাও রাশিয়ায় আছেন। তবে আসাদের পরিবারের চূড়ান্ত পরিণতি কী হবে- তা এখনো অজানা।
বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধে মনোযোগ দেয়ায় আসাদকে শেষরক্ষা করতে পারেনি রাশিয়া। এদিকে হামাসের হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে আরেক মিত্র ইরানও নজর দিতে পারেনি সিরিয়ায়।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেন, ‘ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়া ও ইরানের সমর্থন পেলে আসাদ সরকার আবারও বিজয় অর্জন করতো। তবে এতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ আরও দীর্ঘসময় ধরে চলতো। রাশিয়া এবং ইরান দুই দেশই দেখেছে এতে তেমন ফায়দা নেই। এর কোন মানে হয় না। আসাদকে সহযোগিতা করে আর কোনো লাভ নেই। শুধু শুধু বেসামরিক নাগরিকদের প্রাণ যেতো।’
রুশ জনগণ বলছে, মিত্রদের বিপদে তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। বাশার আল আসাদকে রাশিয়ার আশ্রয় দেয়াটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা।
রাশিয়ার বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘তিনি নিজের জীবনের নিরাপত্তার আশায় রাশিয়ার কাছে আশ্রয় চেয়েছেন। তাকে সাহায্য করা উচিত।’
আরেকজন বলেন, ‘বাশার আল-আসাদের পাশে রাশিয়া ছাড়া কেউ ছিল না। তিনি সিরিয়ায় থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতো।’
রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে আসাদ সরকার। এমন অভিযোগ এনে বিচারের আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। যুদ্ধাপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক আদালতে আসাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির দাবি তুলেছে ফ্রান্স। বিদ্রোহী নেতা আবু মোহাম্মদ আল–জুলানি বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত সরকারের যারা পালিয়ে বিদেশে গেছেন, তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করা হবে।
তবে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা থাকলে রাশিয়া কখনও আশ্রয় নেয়া ব্যক্তিকে ফেরত দেয় না। আর আসাদও এই মুহূর্তে রাশিয়া ছাড়ছেন না। কাজেই আসাদকে সিরিয়ায় ফিরিয়ে বিচারের মুখোমুখি করার সম্ভাবনা কার্যত নেই বললেই লে।