অন্যদিকে সিরিয়া থাকা সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে পরিচিত আইএসআইএস ক্যাম্প নির্মূলে বেশ কয়েকটি সফল বিমান হামলার দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। পাশাপাশি বাশার আল আসাদের পতনে নেতৃত্ব দেয়া বিদ্রোহী প্রধান আবু মোহাম্মদ আল-জুলানির তথ্য দেয়া জন্য এখনও এক কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা অব্যাহত রেখেছে ওয়াশিংটন।
সিরিয়ার সরকার বিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল শামের টানা ১২ দিনের জোরালো হামলার মুখে রোববার পতন হয় স্বৈরাচার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের ২৪ বছরের শাসন সাম্রাজ্য। এরপর দেশটিতে থাকা ইরানপন্থি মিলিশিয়াদের আস্তানা লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। এতে কেঁপে ওঠে রাজধানী দামেস্কসহ আশপাশের এলাকা।
দামেস্কের মেজ্জাহ নামক এলাকায় থাকা মিলিশিয়াদের অস্ত্র ডিপো ও ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র বিকাশে একটি গবেষণা কেন্দ্রে হামলা চালানো ছাড়াও একটি ফাঁকি দখলের দাবি করছে ইসরাইল। আর মধ্য সিরিয়ায় থাকা ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া-আইএসআইএস ক্যাম্প নির্মূলে বেশ কয়েকটি সফল বিমান হামলার দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। ইরানপন্থীদের অস্ত্র লুট হওয়া এবং বাশার সরকার পতনে বিজয়ী বিদ্রোহীদের হাতে অস্ত্রগুলো ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কায় এসব অস্ত্রভাণ্ডারগুলোকে হুমকি হিসেবে বিবেচনায় ধ্বংস করা হচ্ছে।
এর আগে গোলান মালভূমির সিরিয়া-ইসরাইল সীমান্তের বাফার জোন দখলে সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। বাশারের পতন হিজবুল্লাহ ও ইরানের বিরুদ্ধে ইসরাইলি বাহিনীর সফল অভিযানের একটি ফলাফল বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী-আইডিএফ'কে নির্দেশ দিয়েছি বাফার জোন এবং এর সংলগ্ন কমান্ডিং অবস্থানগুলো দখল করতে। কারণ আমরা কোনো শত্রুর শক্তিকেই আমাদের সীমান্তে প্রতিষ্ঠিত হতে দেব না। একই সঙ্গে আমরা কীভাবে ভালো প্রতিবেশী সম্পর্ক স্থাপন করা যায় সে বিষয়ে কাজ করছি।’
এদিকে বাশার আল আসাদের পতনে নেতৃত্ব দেয়া বিদ্রোহী প্রধান আবু মোহাম্মদ আল-জুলানির তথ্য দেয়া জন্য এখনও ১০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা অব্যাহত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ ২০১৩ সালে জুলানিকে আল কায়েদার একজন সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করেছিলো যুক্তরাষ্ট্র। যদিও আল কায়েদার সাথে ২০১৬ সালে জুলানি সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন বলে জানা যায়। বাশার পতনের পর দামেস্কের ঐতিহাসিক উমাইয়া মসজিদে সিরীয়দের জন্য ভাষণ দিতে দেখা গেছে এই আলোচিত নেতাকে।
সিরিয়ার হায়াত তাহরির আল শামের প্রধান আবু মোহাম্মাদ আল-জুলানি বলেন, ‘এই বিজয় সমগ্র ইসলামি জাতির ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়। এটি এই অঞ্চলের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট। এর মধ্য দিয়ে আমরা অনেক বিপদ এড়াতে পেরেছি। আসাদ সিরিয়াকে ইরানের উচ্চাকাঙ্ক্ষার হাতে তুলে দিয়েছিলো। সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়েছেন এবং সারা দেশে দুর্নীতি পাহাড় গড়েছেন।’
বাশার আল আসাদ সরকারের পতনে খুশি হলেও বিদ্রোহী নেতাদের কাঁধে সন্ত্রাসী তকমা থাকায় তাদের ঝুঁকি থেকে সিরিয়ার জনগণকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গর্বিত সিরিয়া প্রতিষ্ঠা ও ভুক্তভোগীদের ভাল ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার ঐতিহাসিক এই সুযোগ যুক্তরাষ্ট্র হাত ছাড়া করতে চায় না বলেও জানান বিদায়ী প্রেসিডেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘আমরা সবাই যখন পরবর্তী কী হবে সেই প্রশ্নের দিকে ফিরে যাচ্ছি, তখন বলতে চাই আমরা আমাদের অংশীদার এবং সিরিয়ার স্টেকহোল্ডারদের সাথে কাজ করবে। যাতে ঝুঁকি মোকাবিলার সুযোগ কাজে লাগানো যায়। আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি যে, আইএসআইএস তার সক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে এবং একটি নিরাপদ আশ্রয় তৈরি করতে যেকোনো শূন্যতার সুযোগ নিতে চাইছে। আমরা তা হতে দেব না।’
মিত্র বাশার আল আসাদ পতনে আইএসআইএসের হুমকিতে ধুঁকছে ইরানও। বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে না গেলে ভবিষ্যতে ইরানেও যুদ্ধের কবলে পরবে বলে শঙ্কা দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচির। উদ্বিগ্ন ইসরাইলকে নিয়েও।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, ‘এখন ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের জন্য একটি বিশেষ উদ্বেগের বিষয় হল ইহুদিবাদী শাসনের অপব্যবহার। ইতোমধ্যে তারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে এবং সিরিয়ায় হামলা চালিয়েছে। তারা গোলানের কিছু এলাকা পুনরুদ্ধারে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এটি সম্পর্কে সতর্কতা হওয়া উচিত।’
এদিকে বিদ্রোহীদের জোরালো অভিযানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়ে পালানো সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ পরিবারসহ রাশিয়ায় অবস্থান করছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো।