বিদ্যুৎগতিতে একের পর এক শহর নিজেদের দখলে নিচ্ছে সিরিয়ার বিদ্রোহী বাহিনী। আলেপ্পো, ইদলিব, হামা ও দারার পর ঘিরে ফেলেছে রাজধানী দামেস্কও। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের বেশিরভাগ অঞ্চলই এখন হায়াত তাহরীর আল শামের দখলে। সেখান থেকে এরই মধ্যে সেনাদের সরিয়ে নিয়েছে প্রেসিডেন্ট আসাদের সামরিক বাহিনী।
প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ রাজধানী দামেস্কেই অবস্থান করছেন। বিদ্রোহীদের অভিযানের মুখেও দেশ ছাড়তে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তিনি। তার পালিয়ে যাওয়ার আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরকে গুজব বলছে দেশটির সরকার। এদিকে, দামেস্কের বেশ কয়েকটি জায়গায় প্রেসিডেন্ট আসাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নেমেছে বাসিন্দারা। সিরিয়ার সেনাবাহিনী বলছে, দামেস্কের আশেপাশে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। সেনাদের ওপর বিশ্বাস রাখতে বলেছে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
সিরিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র জেনারেল আলী মাহমুদ আব্বাস বলেন, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যম মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়িয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। তারা শত্রুদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে মরিয়া হয়ে আছে। সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে সেনারা। দামেস্কের আশেপাশে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়েছে। সেনাদের ওপর সবাইকে ভরসা রাখতে হবে।’
হামা শহর দখলের পর সামরিক বাহিনীর বিমানবন্দরও নিজেদের কব্জায় নেয় বিদ্রোহীরা। বিমানবন্দরে পড়ে আছে যুদ্ধবিমানসহ বিভিন্ন অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র। এছাড়া, হামা শহরের আশেপাশের গ্রামাঞ্চল ও সেনাক্যাম্পও দখল করেছে তারা। কয়েক হাজার সিরীয় সেনা সীমান্ত অতিক্রম করে ইরাকে আশ্রয় নিয়েছে।
বিদ্রোহীদের একজন বলেন, ‘হামা সামরিক বিমানবন্দরকে শত্রুদের হাত থেকে আমরা উদ্ধার করেছি। যুদ্ধবিমান ও সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে সিরিয়াবাসীর ওপর নির্যাতন চালানো হতো।’
আরেকজন বলেন, ‘গোটা সিরিয়াকে মুক্ত না করা পর্যন্ত আমরা অভিযান চালিয়ে যাব। এদেশের মানুষের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনবো।’
এদিকে, মার্কিন সমর্থিত সিরিয়ার কুর্দি যোদ্ধারা দেইর আল-জোর দখলে নিয়েছে। তাদের বক্তব্য, সিরিয়ার সরকার, ইরান ও সহযোগী মিলিশিয়াদের হাত থেকে এই শহরকে মুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া, ইসরাইল অধিকৃত সীমান্ত অঞ্চল গোলান মালভূমির কুনেইত্রা শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বিদ্রোহীরা। এরপর সেখানে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে ইসরাইল।
এমন অবস্থায় কাতারের রাজধানীতে অনুষ্ঠিত দোহা ফোরামে সিরিয়া সংকট নিয়ে আলোচনায় বসে রাশিয়া, ইরান ও তুরস্ক। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ জানান, সিরিয়ায় অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধে একমত হয়েছে ইরান, তুরস্ক ও রাশিয়া।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরব বলেন, ‘বিদ্রোহীরা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে এই সমস্যার সমাধান খুব একটা সহজ হবে না। তবে খুব সাবধানে রাজনৈতিকভাবে জনগণের হাতে ছেড়ে দেয়া উচিত। সিরিয়ায় ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায় প্রতিটি সম্ভাব্য উপায়ে আমরা কাজ করবো। বৈধ সিরিয়ান কর্তৃপক্ষকে সমর্থন করে যাব।’
জাতিসংঘ বলছে, সিরিয়ায় জরুরিভিত্তিতে রাজনৈতিক পরিবর্তন প্রয়োজন। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির তথ্য মতে, সিরিয়ায় চলমান দীর্ঘ সংঘাতে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার পথে। এরই মধ্যে খাদ্য সংকটে ভুগছে ১ কোটি ৩০ লাখ বাসিন্দা।