আলেপ্পো দখলের পর বিদ্রোহীদের রুখে দিতে ইরান আর তুরস্কের কাছে প্রত্যাশা অনুযায়ী সহায়তা পাননি সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদ। সিভিল ডিফেন্সের সাথে রুশ সেনারা যৌথভাবে আসাদবিরোধীদের দমনে যে তৎপরতা দেখাচ্ছিলো, তাতে পড়েছে ভাটা। আসাদের দুরবস্থা অনুধাবন করে তার্তুস সমুদ্রবন্দর থেকে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ নৌযান সরিয়ে নিচ্ছে রাশিয়া।
নেভাল নিউজের প্রতিবেদন বলছে, গেল সোমবার থেকে একের পর এক ফ্রিগেট ও সাবমেরিনসহ ইয়েলনার মতো যুদ্ধযান সরিয়ে বন্দর খালি করে ফেলেছে পুতিনবাহিনী। বিশেষজ্ঞদের মতে, তার্তুস বন্দরটি মূলত বাণিজ্যিক কারণে নির্মিত হলেও এই ভূমধ্যসাগরীয় এই নৌঘাঁটিটি মস্কোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সেনাঘাঁটি। বিশেষকরে নৌযান মেরামত ও সমাধানের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এই ঘাঁটি ব্যবহার করেন রুশ সেনারা। এমনকি সিরিয়ায় সেনা পাঠাতেও তার্তুস বন্দরের ওপর নির্ভর করতে হয় মস্কোকে। ফলে, বন্দর থেকে সরে যাওয়ার যে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে তা বাসার আল আসাদ প্রশাসনের জন্য কোনো স্বস্তির খবর নয়। যদিও সিরিয়ার নির্বাচিত সরকারের প্রতি সর্বোচ্চ সমর্থন অক্ষুণ্ন থাকবে বলেও মঙ্গলবার বিবৃতি দিয়েছে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
দিকে, আলেপ্পোর তেল রিফাত শহরে বিজয় উদযাপন করতে দেখা গেছে আসাদ বিদ্রোহীদের। ধ্বংস হয়ে যাওয়া ট্যাঙ্কে উঠে স্লোগান দেয়ার পাশাপাশি, রাস্তায় টহল দিচ্ছেন তারা।
আসাদ বিদ্রোহীদের একজন বলেন, ‘যেখানে সন্ত্রাসবাদ সেখানেই আমরা সোচ্চার থাকবো। যেখানে শত্রুপক্ষ অপেক্ষা করছে আমরা সেখানেও পৌঁছে যাব। যারা মুসলমানদের ওপর আগ্রাসন চালাবে আমরা তাদের উপযুক্ত জবাব দেব।’
আরেকজন বলেন, ‘পরিস্থিতি শান্ত হওয়ায় সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাই। আসাদের সৈন্যদের সব দিক থেকে ঘিরে ফেলা হয়েছে।’
আলেপ্পো দখলের পর বিদ্রোহীদের এই উচ্ছ্বাসের প্রতিফলন দেখা গেছে স্থানীয়দের মধ্যেও। আলেপ্পোর প্রধান সড়কে ঘরমুখো মানুষ বোঝাই ট্রাক ও মোটরবাইকের ভিড়ও ছিল চোখে পড়ার মতো।
স্থানীয়দের একজন বলেন, ‘আমরা আলেপ্পোর পথে। ৮ বছর পর বাড়ি ফিরছি। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ অনেক কষ্টে বাড়ি ফিরতে পারছি। পরিবারের সাথে মিলিত হতে পারবো।’
গেল বুধবারও হামার উত্তর ও পূর্বাঞ্চলীয় কয়েকটি গ্রামে সিরীয় সেনাবাহিনী ও মিলিশিয়াদের সাথে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে বিদ্রোহীরা। গেল এক সপ্তাহে সিরিয়ার সবচেয়ে বড় শহর আলেপ্পো দখলের পর ধীরে ধীরে কোণঠাসা হয়ে পরেন প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদ। আলেপ্পোর পর হামায় বিদ্রোহীদের আধিপত্য আসাদের জন্য এখন নতুন চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।
গেল সপ্তাহের উত্তেজনার বিরূপ প্রভাব পড়েছে আলেপ্পোর স্বাস্থ্যব্যবস্থায়। বুধবার রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে আলেপ্পো ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের কর্তব্যরত এক চিকিৎসক অভিযোগ করেন, দুপক্ষের সংঘর্ষের কারণে বিভিন্ন স্থান থেকে ছোঁড়া বোমার আঘাতে হাসপাতালের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতিও তীব্র হচ্ছে এমন অভিযোগও করেন তিনি।
যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, আপাতত বিদ্রোহীদের সমর্থন দিয়ে গেলেও, যুক্তরাষ্ট্র বা সৌদি সরকার চায় না বাসার আল আসাদের পতন হোক। মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় তুরস্কের নাম প্রস্তাব করা হলেও, এরদোয়ান প্রশাসন বলছে, রাজনৈতিক সংলাপ ছাড়া এই সংকট সমাধান সম্ভব না।