স্থানীয় সময় বুধবার (৮ জানুয়ারি) রাশিয়ার সারাতোভ শহরের একটি তেলের ডিপোতে ইউক্রেনের হামলায় দুই জন নিহত হন। জবাবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাল্টা হামলা চালায় রুশ বাহিনী। তাদের গাইডেড বোমা হামলায় ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়ার অঞ্চলে প্রাণ গেছে বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিকের। একটি বহুতল আবাসিক ভবন, শিল্প-কারখানাসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনায় আগুন ধরে যায়। এ সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীবাহী একটি ট্রাম ও বাসে বোমার আঘাতেও হতাহত জন বেশ কয়েকজন।
ইউক্রেনের স্থানীয় একজন বলেন, 'এই প্রবেশপথ দিয়ে বের হওয়ার সময় হুট করেই আক্রমণটি হয়। খুব জোরে দুটি বিস্ফোরণ ঘটে।'
অণ্য একজন স্থানীয় বলেন, 'এই আবাসিক এলাকা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এতে বহু মানুষ হতাহত হয়েছেন।'
এছাড়াও ইউক্রেনের সাঁজোয়া যান, গোলাবারুদের ডিপো ও সেনাদের বেস ক্যাম্পে আক্রমণ চালায় রাশিয়া। এসময় ইউক্রেনের ৩২টি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছেই।
এদিকে, রুশ বাহিনীর হামলাকে বর্বর বলে উল্লেখ করেছেন ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। কিয়েভ সফররত ফিনিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎও করেন তিনি। ইউক্রেনকে পূর্ণ সমর্থন দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে ফিনল্যান্ড। এছাড়া ইউক্রেনের নিরাপত্তার জন্য ন্যাটোর সদস্যপদই একমাত্র উপায় বলেও জানান ফিনিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ফিনল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিনা ভালটোনেন বলেন, 'রাশিয়া অবশ্যই সমগ্র ইউরো-আটলান্টিক জোটের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। সবাইকে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করতে হবে। বছর তিনেক আগেও কেউ ভাবেনি ফিনল্যান্ড ও সুইডেন ন্যাটোর সদস্য হবে।'
যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, উত্তর কোরিয়ার সহায়তায় রাশিয়া আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। জাতিসংঘে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে মার্কিন প্রতিনিধি জানান, পিয়ংইয়ং বেআইনিভাবে ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাচ্ছে। অন্যদিকে রাশিয়ার দাবি, কোরীয় অঞ্চলে সামরিক মহড়া চালিয়ে উত্তর কোরিয়াকে উস্কে দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
জাতিসংঘে উত্তর রাশিয়ার প্রতিনিধি ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, 'নিরাপত্তা পরিষদের বেশকিছু সদস্য উত্তর কোরিয়ার দুর্দশা ও ভাগ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন। আবার তারাই উত্তর কোরিয়াকে সুখী ও সমৃদ্ধ হিসেবে দেখতে চায়। এগুলো ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছুই নয়। নিজেদের নাগরিক ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তাদের সবকিছু করার অধিকার আছে। এখানে কারও বাধা দেয়া উচিত না।'
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী প্রতিনিধি ডরোথি ক্যামিল শি বলেন, 'রাশিয়া এখন উত্তর কোরিয়ার দিকে ঝুঁকছে। যুদ্ধ পরিচালনায় সেনার পাশাপাশি সামরিক সহায়তাও নিচ্ছে। রুশ ভূখণ্ডে ১২ হাজারের বেশি কোরীয় সেনা এখনো আছে। এদের সহায়তায় রাশিয়া আরও বেশি আগ্রাসন চালাচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কোনো বিদেশি বাহিনীর সহায়তা নেয়ার ঘটনা রাশিয়ার এটিই প্রথম।'
জবাবে উত্তর কোরিয়া বলছে গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর গণহত্যা যুক্তরাষ্ট্রের চোখে পড়ে না। তারা সেটিকে আত্মরক্ষা বলে বৈধতা দিচ্ছে।
জাতিসংঘে উত্তর কোরিয়ার প্রতিনিধি কিম সং বলেন, 'গাজায় ইসরাইলি বাহিনী গণহত্যা চালাচ্ছে। ৪৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি এরইমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন। এরপরও যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের সাফাই গাইছে। আত্মরক্ষার অধিকার বলে তাদেরকে গণহত্যা চালানোর বৈধতা দিচ্ছে।'
এদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজের ক্ষমতা গ্রহণের আগেই ইউক্রেনকে আরও ৫০ কোটি মার্কিন ডলারের অস্ত্র সহায়তা দিতে প্রস্তুত বাইডেন প্রশাসন। ট্রাম্পের শাসনামলেও এই সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলেও আশা ইউক্রেনের।