মূল্যস্ফীতি আকাশ ছুঁয়েছে। কিন্তু ব্ল্যাক ফ্রাইডে'র কেনাকাটায় এমন কিছু বোঝার উপায় নেই। মূল্যছাড়ের শতভাগ সুযোগ নিতে ছুটে যাচ্ছেন ক্রেতারা।
ভেনেজুয়েলার রাজধানী কারাকাসে একটি শপিং মল থেকে টেলিভিশন সেট কিনে খুশি এই ব্যক্তি পেশায় নির্মাণশ্রমিক। ক্রয়ক্ষমতা সীমিত হলেও বিশাল মূল্যছাড়ের পর টিভি হাতের নাগালে এসেছে তার।
ক্রেতাদের একজন বলেন, ‘ক্রয়ক্ষমতার বাইরে অনেক নিত্য ব্যবহার্য পণ্য ব্ল্যাক ফ্রাইডের ছাড়ে আমাদের সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে চলে আসে। ভালো দামে সবাই টিভি কিনতে পেরেছি। ভেনেজুয়েলায় মার্কিন কিছু সংস্কৃতির প্রচলন হয়ে সত্যিই ভালো হয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রে থ্যাংকস গিভিংয়ের পরের শুক্রবার বিশেষ মূল্যছাড়ের উৎসব চলে দেশজুড়ে। গেলো কয়েক বছর ধরে বিশ্বের আরও অনেক দেশের সাথে এ রীতি গ্রহণ করেছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলাও। গেলো অক্টোবরে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি ছিল বছরের সর্বোচ্চ, ২৩ শতাংশের বেশি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে অনেক নিত্যপণ্যই চলে গেছে সাধারণ ভেনিজুয়েলানদের নাগালের বাইরে। এমন সময়েই মূল্যছাড়ে কেনাকাটার এ উৎসব।
আরেকজন বলেন, ‘বিদেশি রীতি হলেও আমরা খুব ভালোভাবে এটি গ্রহণ করেছি। রাস্তাঘাট মানুষে পূর্ণ। দোকানপাটে ভীষণ ভিড়। বছরে একবার এমন সুযোগের শতভাগ সদ্ব্যবহার করছে সবাই।’
যে দেশে এই ব্ল্যাক ফ্রাইডের প্রচলন শুরু, সেখানে পরিস্থিতি আরও উৎসবমুখর। শহরে শহরে বিভিন্ন শপিংমলের সামনে দোকানপাট খোলার ঘণ্টা কয়েক আগে থেকেই হাজারে হাজারে মানুষ। নর্থফেস, কোচ, পোলো র্যাল্ফ লরেনসহ বড় বড় দোকানের সামনে সব শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই পছন্দের পণ্যটি লুফে নেয়ার অপেক্ষায় সবাই, ভিড় সামলে ক্রেতাদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে প্রস্তুত বিক্রেতারাও।
বিক্রেতাদের একজন বলেন, ‘অনেক আগে পৌঁছেছি। যানজট এড়াতে ভোর সাড়ে ৫টা, ৬টার দিকেই চলে এসেছি।’
আরেকজন বলেন, ‘এখন থেকেই সত্যিকার অর্থে ছুটির মৌসুম শুরুর আমেজ তৈরি হয়ে গেছে। আজ কেমন বিক্রি হবে, তার ওপর নির্ভর করছে বড়দিনের বাজার কেমন হবে। মনে হচ্ছে এবার বড়দিন আমাদের জন্য একটু আগেই আসবে।’
থ্যাংকসগিভিং থেকে শুরু করে বড়দিন পর্যন্ত কেনাকাটার জন্য ২৬ দিন হাতে আছে মার্কিন ক্রেতাদের। বাজার বিশেষজ্ঞদের আভাস, এবারের ব্ল্যাক ফ্রাইডেতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১১শ' কোটি ডলারের পণ্য বিক্রি হতে পারে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ বেশি। এবার সশরীরে কেনাকাটায় যোগ দিতে পারেন আট কোটি ৫৬ লাখ ক্রেতা, যা গত বছর ছিল সাত কোটি ৬০ লাখ। যদিও ক্রেতারা বলছেন, ভিড় আগের তুলনায় খানিকটা কমই।
ক্রেতাদের একজন বলেন, ‘অন্যান্য বছরের মতো মানুষ এবার দেখছি না। এটা স্বাভাবিক। শুধু যুক্তরাষ্ট্রে তো নয়, সারা বিশ্বে বর্তমানে যে হাল, তাতে বোঝা যায় ভিড় হালকা কেন। বিশেষ করে এটা নির্বাচনের বছর ছিল, অনেকেই শঙ্কিত যে সামনের দিনগুলো কেমন হবে।’
অন্যান্যবারের মতো ভিড় মনে হচ্ছে না। মানে কোনো কিছু নিতে কারো সাথে লড়াই করতে হচ্ছে না। খুবই ব্যস্ত চতুর্দিক। কিন্তু তাও এ বছর অন্যান্য বছরের মতো হুড়োহুড়ি নেই। মার্কিন অর্থনীতিতে ভোক্তা ব্যয় প্রায় ৭০ শতাংশ, যার বড় অংশজুড়ে রয়েছে খুচরা ব্যবসা।