বিদেশে এখন
0

অবৈধ অভিবাসীদের তাড়াতে জরুরি অবস্থা জারির প্রতিশ্রুতি ট্রাম্পের

অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়িত করতে দেশে জরুরি অবস্থা জারির পাশাপাশি সেনা সদস্য মোতায়েন করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে একটি মাত্র শব্দ লিখে রিপাবলিকান এই নেতা নিশ্চিত করেন, ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিন থেকে অবৈধ অভিবাসীদের দেশছাড়া করতে শক্ত পদক্ষেপ নেবেন তিনি। টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে এই একই পরিকল্পনার পক্ষে সাফাই দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট দপ্তরের সম্ভাব্য প্রধান টমাস হোম্যান।

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এলে দেশ থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক অবৈধ অভিবাসী বিতাড়িত করবেন বলে একাধিক গণমাধ্যম ও প্রচারসভায় হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তনের প্রথম দিন থেকে অবৈধ অভিবাসী সংকট সমাধানে কাজ শুরু করবেন এ ধরনের কথাও বহুবার উচ্চারণ করেছেন ক্যামেরার সামনে।

৯ নভেম্বর ট্রুথ সোশ্যালের এক পোস্টে পলিটিক্যাল অ্যাক্টিভিস্ট ও ডানপন্থি সমর্থক টম ফিটন দাবি করেন, বাইডেন প্রশাসনের ব্যর্থ নীতির কারণে দেশজুড়ে অবৈধ অভিবাসীদের যে দৌরাত্ম্য শুরু হয়েছে তা বন্ধ করতে ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ঘোষণা ও সেনা মোয়ায়েনের মতো শক্ত পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। সোমবার (১৮ অক্টোবর) নিজের প্রোফাইল থেকে টমের এই পোস্ট শেয়ার করে ৪ অক্ষরের একটি মাত্র শব্দে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রু বা সত্য- এই এক শব্দেই বুঝিয়ে দিয়েছেন অবৈধ অভিবাসীদের বিষয়ে কোনোভাবেই নমনীয় হবে না নতুন প্রশাসন।

অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ন্ত্রণ করতে এরই মধ্যে সীমান্ত সুরক্ষা ও কাস্টমস বিভাগের জন্যে 'বর্ডার জার' খ্যাত টমাস হোম্যানের নাম প্রস্তাব করেছেন ইউএস প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট ট্রাম্প। ২০২০ সালে ট্রাম্পের শাসনামলে এই একই দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালকের দায়িত্ব সামলেছেন টামাস। ইমিগ্রেশন অফিসার থেকে কাস্টমসের সহকারী পরিচালক পদে উন্নীত হন ওবামা প্রশাসনের নির্দেশে। অভিবাসী ইস্যুতে নিউজ নেশনসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পের কথার পুনরাবৃত্তি করে টমাস বলেন, সীমান্তে অবৈধ অভিবাসীদের অনুপ্রবেশ বন্ধ না করা হলে, কাজের অনুমোদন পাওয়া বৈধ অভিবাসীরাই সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়বেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট দপ্তরের সম্ভাব্য প্রধান টমাস হোম্যান বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং আমি বহুবার একই কথা পরিষ্কারভাবে জানিয়েছি, সর্বোচ্চ সংখ্যক অভিবাসীকে একসাথে বিতাড়িত করার যে পরিকল্পনা করা হচ্ছে তার একমাত্র উদ্দেশ্য দেশের মানুষকে সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বর্তমানে দেশে অন্তত ৭ লাখ ভিনগ্রহের প্রাণীর বসবাস। যাদের অধিকাংশই অপরাধের সাথে জড়িত।’

অভিবাসীদের আবর্জনার স্তূপ, এলিয়েন বা ভিনগ্রহের প্রাণীসহ বিভিন্ন শব্দে সম্বোধন করতে পছন্দ করেন টমাস হ্যোমান। ট্রাম্প বরাবরই অভিযোগ করেন, মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে কুখ্যাত অপরাধী চক্র ও মাদক পাচারকারীরা টেক্সাস হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঘাঁটি স্থাপনের চেষ্টা করছে। ট্রাম্পের এ অভিযোগের পক্ষে যুক্তি দিয়ে টমাস বলেন, মেক্সিকান এসব কার্টেলকে 'অপরাধী সংগঠন' ঘোষণা করে তাদের বিরুদ্ধে মাঠে থাকবে ট্রাম্প প্রশাসন।

বারাক ওবামা ও জো বাইডেন- এই দুই ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলের পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যায়, অভিবাসী সংকট সমাধান ও অবৈধ অভিবাসীদের দেশে ফেরত পাঠানো ইস্যুতে রিপাবলিকানরা অনেক বেশি সফল। ৪ বছরে ট্রাম্প একাই যেখানে সাড়ে ৪ লাখ অনুপ্রবেশকারীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছেন। সেখানে একই সংখ্যক অবৈধ অভিবাসী বিতাড়িত করতে ডেমোক্র্যাট দুই প্রেসিডেন্টের লেগেছে ১২ বছর।

যারা অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসতি স্থাপন করে সন্তান নিয়েছেন, তাদেরকে যদি দেশছাড়া করা হয়, তাহলে জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব পাওয়া নবজাতকের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় অভিবাসী অধিকার রক্ষায় কর্মরত সংগঠনগুলো। আর দীর্ঘ সময়, লোকবল ও ব্যয় সাপেক্ষা এই অভিবাসী বিতাড়িতকরণ নীতি- বাস্তবায়নের রূপরেখা নিয়েও আছে অনেক বিতর্ক। তবে, সবার আগে সেনা মোতায়েন করে মেক্সিকো সীমান্তে অনুপ্রবেশকারীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করাই হবে হবে ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির প্রথম পদক্ষেপ এমনটাই ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা।

ইএ