'মেইড ইন কানাডা', 'প্রাউডলি কানাডিয়ান'- এমন নানা শব্দগুচ্ছ শোভা পাচ্ছে কানাডার দোকানপাটের প্রতিটি তাকে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমদানি শুল্কারোপের জেরে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরাঞ্চলীয় প্রতিবেশির সাথে বাণিজ্যযুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে এমন দৃশ্য গেল কয়েক সপ্তাহে বেশ নিয়মিতই হয়ে উঠেছে কানাডায়।
কানাডার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় কানাডাজুড়ে বইছে দেশপ্রেমের হাওয়া। ভোক্তা পর্যায়ে তো বটেই, বিপুলসংখ্যক কানাডীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বর্জন করছে মার্কিন পণ্য। রাজধানী অটোয়া থেকে এক ঘণ্টার দূরত্বে শেস্টারভিল গ্রামের দোকান থেকে ধীরে ধীরে মার্কিন পণ্য সরিয়ে নিচ্ছেন বিক্রেতা। নিজের পয়সায় 'প্রাউডলি কানাডিয়ান' লেখা ২০ হাজার স্টিকার ছাপিয়ে এঁটে দিয়েছেন দোকানজুড়ে।
শেস্টারভিল গ্রামের সেই দোকানের মালিক বলেন, 'শুল্ক আরোপের আগে ৩০ দিনের যে সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে আমাদের, বাস্তবতা হলো যে এই সুযোগে পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে পারছি আমরা। এখন মার্কিন পণ্যের ওপর আরও কম নির্ভরশীল হচ্ছি।'
নতুন করে শুল্ক আরোপের আগে ট্রাম্পের দেয়া এক মাসের অতিরিক্ত সময় শেষ হচ্ছে ২ এপ্রিল। কানাডীয় কাঠ ও দুগ্ধজাত পণ্যের ওপর বসবে নতুন শুল্ক, যার মধ্যে দুগ্ধজাত পণ্যে দুই দেশের পারস্পরিক শুল্কের হার আড়াইশ' শতাংশ। বাণিজ্য শুল্কের বোঝা যোগ করার পাশাপাশি কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য করা উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন প্রতিবেশি দেশের নেতা। এতে আরও ক্ষিপ্ত কানাডার সাধারণ মানুষ। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার সাথে যুক্ত যারা, তারাও ভাবছেন দেশে ফেরার কথা।
কানাডার একজন বলেন, 'অনেকেই প্রতিক্রিয়ায় বলছেন, আমি যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চাই না। আমি ওদেরকে আমার ব্যবসায়ে সুযোগ দিতে চাই না। আমি আমার পয়সা সে দেশে খরচ করতে চাই না। এক বছর আগে যারা বুকিং দিয়েছিলেন, তারাও এখন বুকিং বাতিল করছেন।'
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ অ্যালকোহল ক্রেতা লিকার কন্ট্রোল বোর্ড অব অন্টারিও কানাডীয় প্রতিষ্ঠান। এরইমধ্যে নিজেদের মজুত থেকে মার্কিন অ্যালকোহল সরিয়ে ফেলেছে প্রতিষ্ঠানটি।
সেই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন বলেন, 'দুনিয়া এভাবেই চলে। মাঝে মাঝে আপনি এমন পরিস্থিতিতে পড়ে যাবেন যখন আপনার প্রতিক্রিয়া দেখাতেই হবে। আমার মনে হয় তেমনই এক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি।'
কানাডার স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশিয় পণ্য কিনতে ক্রেতাদের উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্য তাদের অনেক দিনের। ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধের প্রভাবে সে লক্ষ্য অর্জনের পথে এগোতে শুরু করেছেন তারা, যা অব্যাহত থাকবে শুল্ক যুদ্ধ শেষ হলেও।