নির্বাচনী প্রচারে নেমে অহরহ চীনা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ কিংবা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য নীতি কঠোরের বুলি আওড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পররাষ্ট্র দপ্তরের দায়িত্ব দিয়েছেন মার্কো রুবিওর মতো চীন বিদ্বেষী সিনেটরকে। ফলে, আগামী ৪ বছর ওয়াশিংটনের আচরণ বেইজিং-এর জন্য কেমন হতে যাচ্ছে- এ নিয়ে গুঞ্জনের শেষ নেই।
কিন্তু মার্কিনদের চীনা বিরোধী এই অবস্থান বিশ্বের জন্য সুখকর কোনো বার্তা আনবে না বলে আশঙ্কা জানিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এপেক সম্মেলনের শেষ দিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে বৈঠকে শি বলেন, ওয়াশিংটন-বেইজিং সম্পর্কের ওপর শুধু আমেরিকান বা চীনা জনগোষ্ঠীর ভাগ্য নির্ভর করে না। এর সাথে বিশ্বের স্বার্থ জড়িয়ে আছে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জোটের রাজনীতিতে দুই দেশের সম্মিলিত স্বার্থরক্ষার ওপর জোর দেন শি।
হোয়াইট হাউজে ক্ষমতার পালাবদল যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কে প্রভাব রাখবে না উল্লেখ করে শি বলেন, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার প্রশ্নে চীনের অবস্থান অপরিবর্তিত থাকবে। প্রেসিডেন্ট শি নিশ্চিত করেন, ট্রাম্প নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের সাথে কাজ করতে আগ্রহী চীন।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, ‘চীন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের সাথে কাজ করতে আগ্রহী। আমরা দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ ধরে রাখার পাশাপাশি পরস্পর বিরোধী অবস্থানে থেকেও শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষে। যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক থেকে দুই দেশের মানুষই উপকৃত হবে- এটাই প্রত্যাশা করি।’
প্রেসিডেন্ট হিসাবে শেষবার কোনো আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নেয়া ও চীনা প্রেসিডেন্টের সাথে বৈঠকের পর জো বাইডেন মন্তব্য করেন, মতাদর্শের পার্থক্য ও বৈরিতা থাকলেও বেইজিং ওয়াশিংটনের মধ্যে কখনোই সংঘাতপূর্ণ সম্পর্ক ছিল না। আগামী ৪ বছর এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘পৃথিবীতে যত ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে তারমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমাদের সম্পর্ক। আমর একে অপরের সাথে যেমন আচরণ করি তার প্রভাব পড়ে গোটা বিশ্বে। প্রতিযোগিতায় নেমে আমার যেন সংঘাতের পথে পা না বাড়াই সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আগামী ৪ বছর আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব এটাই।’
নিত্যনতুন প্রযুক্তির আবিষ্কার শিল্পখাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসছে, যেখানে চীনের সাথে পেরে উঠছে যা যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি প্রযুক্তি বাজারে চীনের আধিপত্য নিয়ে মার্কিন টেক জায়ান্টদের মাথা ব্যথার শেষ নেই। চীনা প্রশাসন মনে করে, বিধিনিষেধ আরোপ কিংবা সরবরাহ ব্যবস্থায় বাধা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে না। বরং দুই দেশেরই স্বার্থরক্ষা হয় এমন নীতি বাস্তবায়নের পথে হাঁটলে সেটাই হবে ট্রাম্প প্রশাসনের বিচক্ষণতার পরিচয়।