ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকাকে ধ্বংসের নগরীতে রূপ দিয়েও থামছে না ইসরাইলি বাহিনী। আগ্রাসন আর বর্বরতার সব মাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে দখলদাররা। অনুমতি নেয়ার পরেও গাজার পোলিও ক্যাম্পে চালিয়েছে প্রাণঘাতি হামলা। এতে অনেক শিশু হাতাহতের শিকার হয়েছে। ভ্যাক্সিনেশন ক্যাম্পে ইসরাইলের এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
এদিকে লেবাননেও আগ্রাসনের ভয়াবহতা বাড়াচ্ছে ইসরাইল। দক্ষিণাঞ্চল ছাড়াও দেশটির উত্তর সীমান্তে ঢুকে পড়েছে ইসরাইলি বাহিনী। বাড়ছে হতাহত ও ধ্বংসযজ্ঞের সংখ্যা। শনিবার রাজধানী বৈরুতে চালানে ইসরাইলি বিমান হামলায় মোহাম্মদ নিজাম নামে এক বাংলাদেশিও নিহত হয়েছেন। মরদেহটি স্থানীয় মাউন্ট লেবানন হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। ৩২ বছর বয়সী নিহত নিজামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার খারেরা এলাকায়। দেশটিতে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাস বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
লেবাননের দক্ষিণে থাকা একটি উপকূলীয় এলাকা থেকে বাসিন্দাদের অপহরণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগও করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি। এরইমেধ্যে একজনকে অপহরণের একটি সিসিটিভি ফুটেজও প্রকাশ করা হয়েছে। মূলত, ২৬ অক্টোবর ইরানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনাকে টার্গেট করে হামলা চালানোর পর গাজা ও লেবাননে আগ্রাসনের মাত্রা বাড়াচ্ছে ইসরাইল। এতে ইরান-ইসরাইলের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়ার শঙ্কা বাড়ছে।
এর মধ্যেই ইসরাইলের একটি সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। তেল আবিবে অবস্থিত ইসরাইলি সামরিক গোয়েন্দা ঘাঁটিতে রকেট নিক্ষেপের মাধ্যমে এই হামলা চালানো হয়েছে বলেও দাবি করেছে গোষ্ঠীটি।
এমন পরিস্থিতির মধ্যেই ইসরাইলের পাশে থাকতে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন বি-ফিফটি টু বোমারু বিমান, জ্বালানি বিমান ও নৌবাহিনীর বিমান বিধ্বংসী ডেস্ট্রয়ার মোতায়েন করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর জবাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইকে হুমকি দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেন, ‘শত্রুরা ইহুদিবাদী শাসন কিংবা যুক্তরাষ্ট্র যেই হোক না কেন, ইরান, ইরানি জনগণ ও প্রতিরোধ গোষ্ঠীর ওপর তারা যা করছে তার জন্য অবশ্যই কঠিন জবাব দেয়া হবে।’
এদিকে ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং লন্ডনে থাকা মার্কিন দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনিপন্থি। এসময় ইসরাইলি হামলায় গাজায় শিশু নিহতের ঘটনা এবং লেবাননে চালানো আগ্রাসনের পরও ইসরাইলকে সহায়তা দিয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ জানান তারা। প্রতীকী মৃত্যুর মধ্য দিয়ে জানানো হয় প্রতিবাদ। শান্তি ফিরিয়ে আনতে জোর দাবি জানানো হয় অস্ত্র সহায়তা বন্ধের। সেইসঙ্গে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কামালা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প কাউকেই ভোট না দিতেও মার্কিন ভোটারদের আহ্বান জানান তারা।
ভোটারদের একজন বলেন, ‘৫ নভেম্বরের ভোটে লাল বা নীল কোনো ফ্যাসিবাদকেই ভোট দেবেন না। ফিলিস্তিনিদের জীবনের জন্য ভোট দিন। এই দুটি প্রার্থী ছাড়া আরও অনেক বিকল্প আছে।’
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরাইলি আগ্রাসনে গাজা উপত্যকায় ৪৩ হাজার ৩শ'র বেশি এবং লেবাননে প্রায় ৩ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।