নির্বাচনী প্রচার গুটিয়ে আনার আগ মুহূর্তে টানা তৃতীয় জনসভাতেও হয় বিরোধীদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য, নয় তো সমর্থকদের ঢালাও প্রশংসা। একদিকে আস্ত রকেট পৃথিবীর বুকে ফিরিয়ে আনায় ধনকুবের ইলন মাস্কের পিঠ চাপড়াচ্ছেন; অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কামালা হ্যারিসকে অলস বলছেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বলছেন কূটকৌশলী।
ক্ষমতায় ফিরলে দেশের মানুষের জন্য কী করবেন, সেসব আশ্বাসের পরিবর্তে বিরোধীদের প্রতি ক্ষোভ উগড়ে দেয়াতেই যেন বেশি ব্যস্ত রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশের প্রেসিডেন্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদধারী ব্যক্তির আবেগ নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে এমন চোটপাটকে ভালো চোখে দেখছেন না অনেকেই।
ব্রুকলিন্স ইনস্টিটিউশনের সিনিয়র ফেলো ইলাইন কামার্ক বলেন, ‘তিনি আগের চেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ। আরও অনেক বিচ্ছিন্ন। কোনো বিষয়ে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেন না। একটা বাক্য সম্পূর্ণ করতে পারেন না। ১৪ বছরের শিশুর মতো আস্ফালন করেন, একই কথা আগেপিছে টানতে থাকেন।’
রোববার (২৭ অক্টোবর) নিউইয়র্কের সমাবেশে ট্রাম্পের হয়ে চালানো প্রচারে অভিবাসীদের নিয়ে গঠিত দেশে তাদেরকে নিয়েই আপত্তিকর মন্তব্য করেন অনেক বক্তা।
অভিবাসীদের আবর্জনা আখ্যা দেয়া মার্কিন কমেডিয়ানের বক্তব্যের সঙ্গে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গির সম্পর্ক নেই বলে তাৎক্ষণিকভাবে তার প্রচারণা শিবির দাবি করলেও এর আগে একই সমাবেশে অভিবাসনবিরোধিতার প্রতিফলন ছিল ট্রাম্পের কণ্ঠেও।
এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, নির্বাচনী প্রচারে লাগামহীন কথাবার্তা ট্রাম্পের জন্য আসলে কতটা লাভজনক হবে। কিংবা এটি লাভের পরিবর্তে উল্টো তার জন্য বিপদ ডেকে আনছে কিনা। দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের একটি, ডেমোক্রেটিক পার্টির সমর্থকদের গণতন্ত্রের শত্রু মনে করা ব্যক্তি রাষ্ট্রপ্রধান হলে তা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি, বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ব্রুকলিন্স ইনস্টিটিউশন সিনিয়র ফেলো ইলাইন কামার্ক বলেন, ‘এটা ভয়ংকর। এভাবে গণতন্ত্র কাজ করে না। গণতন্ত্রে আপনি তাদেরও শ্রদ্ধা করবেন যারা অপর প্রার্থীকে ভোট দেবে এবং আপনার তুলনায় ভিন্নমতে বিশ্বাসী। তাদের আপনি শত্রু ভাবলে হবেনা। তাদের বিচার করার মতো প্রতিশ্রুতি আপনি দিতে পারেন না।’
এদিকে, সবশেষ জনমত জরিপে আভাস, যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এতোটাই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে যে প্রতিযোগিতাপূর্ণ অঙ্গরাজ্যগুলোতে মাত্র কয়েক হাজার ভোটের ব্যবধানে নির্ধারণ করবে জয়-পরাজয়। এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের মুখ না দেখার অর্থ হতে পারে ভোটের মাধ্যমেই তার আক্রমণাত্মক বক্তব্যের জবাব দেয়া।