ভূমধ্যসাগর থেকে শুরু করে পারস্য উপসাগর পর্যন্ত বিশাল উর্বর ভূমির বড় একটি অংশ পড়েছে ইরাকে; যেখানে সফল কৃষিকাজের ইতিহাস শুরু হয়েছে ১০ হাজার বছরের বেশি সময়েরও আগে। কিন্তু এক দিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় অন্যতম প্রধান দুই নদী টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিসে পানির উচ্চতা হ্রাস, অন্যদিকে কয়েক দশকের সংঘাতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত ইরাকের কৃষিখাত।
এমন পরিস্থিতিতে অন্যতম প্রধান খাদ্যশস্য গমের চাহিদা মেটাতে প্রচুর আমদানি করতে হয় ইরাক সরকারকে। মধ্যপ্রাচ্যে সাধারণত গমের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক দেশও ইরাক। কিন্তু চলতি বছর দৃশ্যপট কিছুটা ভিন্ন। প্রত্যাশার চেয়েও বেশি বৃষ্টিপাত, আর তার ওপর সরকারের ভর্তুকিতে এ বছর ১৫ লাখ মেট্রিক টন অতিরিক্ত গম মজুত করেছে বাগদাদ। নির্দিষ্ট সময়ে মূল্য পেয়ে যাওয়া কৃষকদের জন্য এটি দারুণ খবর।
সরকার আমাদের পানি আর বিদ্যুৎও দিয়েছে। সারেও ভর্তুকি পেয়েছি। এসবই প্রধান কারণ উৎপাদন বেড়ে যাওয়ার।
কিন্তু তাও উদ্বেগ ছড়িয়েছে গম বাণিজ্যে বিশাল লোকসানের ঝুঁকির খবর। ভর্তুকি কর্মসূচির আওতায় অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে ইরাকের দরকার ৪৫ থেকে ৫০ লাখ টন গম। শুষ্ক আবহাওয়া সত্ত্বেও গম চাষে উৎসাহ দিতে বিশ্ববাজারের তুলনায় কৃষকদের দ্বিগুণের বেশি দাম পরিশোধ করে ইরাক সরকার।
এ বছর উৎপাদিত গম কৃষকদের কাছ থেকে আগের দামে কিনে বেসরকারি মিলমালিকদের কাছে অতিরিক্ত গমের সবটা বিক্রি করতে পারলেও, বিশ্ববাজারের দামের সঙ্গে মিল রেখে কেনা দামের চেয়ে অর্ধেকে বিক্রি করতে হবে বলে ৪৬ কোটি ডলারের ক্ষতি গুণতে হতে পারে বাগদাদকে।
একে তো শস্যের অতিরিক্ত মজুত, মানে আগামী বছর নতুন ফসল মজুতের সক্ষমতা কমে যাওয়া; তার ওপর শস্য আমদানি করলে দাম আরও কম হবে বলে দাবি মিলমালিকদের। এ অবস্থায় অতিরিক্ত গম দেশের ভেতরে রাখলে ব্যবসায়ীদের বিরোধিতাও সামলাতে হতে পারে ইরাক সরকারকে।
ইরাকের একটি বেসরকারি মিল মালিক আলি ফাদেল বলেন, ‘বর্তমানে প্রতি টন গমের দাম দেশে প্রায় ৩৪৩ ডলার, যা বিশ্ববাজারের দামের চেয়েও বেশি। আমরা আশা করবো যে সরকার বিশ্ববাজারের দামের ওপর ভিত্তি করে স্থানীয় বাজারে গমের মূল্য পুনঃনির্ধারণ করবে।’
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পাঁচটি দেশের তালিকায় ইরাককেও রেখেছে জাতিসংঘ, যার আওতায় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। কিন্তু জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ায় অপরিশোধিত তেল রপ্তানিতে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ইরাকের ২০২৫ সালের বাজেটে ব্যয়ও নিম্নমুখী। এমন পরিস্থিতিতেও অতিরিক্ত গম রপ্তানির পরিবর্তে দেশের ভেতরে রাখতেই আগ্রহী বাগদাদ।
ইরাকের শস্য অধিদপ্তরের পরিচালক হায়দার নূরী বলেন, ‘ইরাকের ইতিহাসে এবারই প্রথম এতো বেশি গম উৎপাদন হয়েছে। গত বছরের চেয়ে ২১ শতাংশ বেশি। তাই আমাদের এবার গম আমদানি করতে হচ্ছে না। আগামী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এতেই চাহিদা মিটবে। তারপরেও কৌশলগত মজুত থেকে যাবে।’
পরিস্থিতির জন্য দুর্বল পরিকল্পনাকে দায়ী করে সমালোচকরা বলছেন, কৃষকদের প্রণোদনা এবং সীমিত আর্থিক ও অন্যান্য সক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা প্রয়োজন। প্রশ্ন উঠছে, মরু অঞ্চলে পানির বিস্তর অপচয় করে প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত উৎপাদনের কারণ নিয়েও।