বিদেশে এখন
0

রতন টাটার ব্যর্থতা-সাফল্যের গল্প

ভারতের অন্যতম বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান টাটা গ্রুপের ইমেরিটাস চেয়ারম্যান রতন টাটা মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ গোটা ভারত। শোক জানিয়েছেন রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে তারকা সবাই। অর্ধশত বছর ধরে নিরলস পরিশ্রম দিয়ে তিল তিল গড়ে তুলেছেন টাটা গ্রুপকে। তার নেতৃত্বে এই গ্রুপের আয় বেড়েছে ৪০ গুণ। ২১ বছর প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন রতন টাটা। তার মৃত্যুতে মহারাষ্ট্রে একদিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে।

লবণ থেকে সফটওয়্যার কী নেই টাটা গ্রুপের শিল্পে? তাদের শতাধিক কোম্পানিতে কর্মরত আছে সাড়ে ৬ লাখের বেশি কর্মী। শিল্পগোষ্ঠীটির বার্ষিক রাজস্ব আয় ১০ হাজার কোটি ডলারের ওপর। দেড় শতাধিক পুরোনো এই প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের ১০০টি দেশের সঙ্গে ব্যবসা করছে। টাটা গ্রুপ এমন সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছেছিল যার হাত ধরে- তিনি রতন নেভাল টাটা।

১৯৯১ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যানে দায়িত্বে ছিলেন রতন টাটা। তার নেতৃত্বে গাড়ি প্রস্তুতকারী কোম্পানি জাগুয়ার ও ল্যান্ড রোভারের অধিগ্রহণ করে টাটা গ্রুপ। ২০০০ সালে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম চা কোম্পানি টেটলি নিয়ে আসেন তিনি। অবশ্য টাটা গ্রুপে যোগদানের শুরুতেই তাকে ঝাড়খন্ডের জামশেদপুরে ইস্পাতের কারখানায় পাঠানো হয়। কয়েক বছর সেখানে কাজ করার পর ব্যবস্থাপকের প্রযুক্তিবিষয়ক সহকারীর দায়িত্ব পান রতন টাটা। সত্তরের দশকের শুরুতে টাটার রেডিও, টেলিভিশন ও অন্যান্য টেক্সটাইলের দায়িত্ব নেন তিনি। ২০০৯ সালে এক লাখ রুপিতে মধ্যবিত্তের হাতে গাড়ি তুলে দেয়ার প্রকল্প হাতে নেন রতন টাটা। যদিও সেটি সাফল্যের মুখ দেখেনি।

১৯৩৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর ভারতের মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন রতন নেভাল টাটা। তার পূর্বপুরুষেরা ব্রিটিশ আমলে ইরান থেকে ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ১৯৪০ সালে রতন টাটার মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়। তারপর দাদীর কাছেই বড় হন রতন টাটা।

স্কুলজীবনের শেষ তিন বছর রতন টাটা মুম্বাইয়ের ক্যাম্পিয়ন ও ক্যাথেড্রাল অ্যান্ড জন কনন স্কুলে পড়েছেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে কর্নেল ইউনিভার্সিটিতে স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। ৭ বছর থাকার পর যুক্তরাষ্ট্রেই স্থায়ী হতে চেয়েছিলেন তিনি। দাদী অসুস্থ হলে ভারতে ফিরে আসেন এবং ১৯৬২ সালে টাটা শিল্পগোষ্ঠীতে যোগ দেন।

বার্ধক্যজনিত কারণে বেশকিছুদিন মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন রতন টানা। গত বুধবার রাতে আইসিইউতে ৮৬ বছর বয়সে মারা যান তিনি। তার মৃত্যুতে শোকে ভাসছে গোটা ভারত। শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাহুল গান্ধী। একজন প্রিয় বন্ধুকে হারিয়েছেন বলে এক শোক বার্তায় জানিয়েছেন ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানি। গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই শোক জানিয়েছেন। এছাড়া, শোকবার্তা পাঠিয়েছেন খেলোয়াড় থেকে বলিউড তারকারা।

হাসপাতাল থেকে তার মরদেহ মুম্বাইয়ের নিজ বাসভবনে নিয়ে আসা হয়। এরপর স্বর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য রাখা হয় মুম্বাইয়ের ন্যাশনাল সেন্টার ফর দ্য আর্টস ভবনে। রতন টাটার মৃত্যুতে মহারাষ্ট্রে এক দিনের শোক ঘোষণা করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। রাষ্ট্রীয়ভাবে তার শেষকৃত্য করা হবে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে।

রতন টাটাকে শেষবার জনসম্মুখে দেখা গিয়েছিল গত মে মাসে। মুম্বাইয়ের একটি পোলিং বুথে তিনি ভোট দিতে এসেছিলেন।২০০৮ সালে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মবিভূষণে ভূষিত হন রতন টাটা।

ইএ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর