বিদেশে এখন
0

বিশ্ব পরিস্থিতির স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনতে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে: জাতিসংঘ মহাসচিব

বিশ্ব পরিস্থিতির স্বাভাবিক গতি-প্রকৃতি ফিরিয়ে আনতে এখন কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। সামিট ফর দ্য ফিউচার শীর্ষক আলোচনায় প্রথম দিন বিশ্ব নেতাদের সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘বিশ্বে অন্তর্ভুক্তি আর বহুপাক্ষিকতা ফিরিয়ে আনতে ভবিষ্যতের জন্য একটি চুক্তি গ্রহণ করেছে জাতিসংঘ। এসময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলমান সংঘাত নিয়েও উদ্বেগ জানান তিনি। সম্মেলনে বিশ্বে অসমতা আর অস্থিতিশীলতা নিরসনে জাতিসংঘকে গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানান কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।

বহুপাক্ষিকতা বা অভিন্ন লক্ষ্যে একাধিক দেশের একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়কে বিলুপ্ত হওয়ার দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে জাতিসংঘ। বিশ্ব এখন লাইনচ্যুত হয়েছে, সঠিক পথে আনতে বিভিন্ন সংস্থার এখন নিবিড় পুনর্গঠন প্রয়োজন। এভাবেই জাতিসংঘের সম্মেলনে বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।

বিশ্বে নতুন সম্ভাবনা আর সুযোগ তৈরিতে এই সম্মেলনে ভবিষ্যতের জন্য চুক্তি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। মধ্যপ্রাচ্য, ইউক্রেন ও সুদান ইস্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, পরমাণু হামলার ঝুঁকি, যুদ্ধের জন্য নতুন অস্ত্র তৈরি বিশ্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘আস্থা ফেরাতে এখন থেকেই কাজ শুরু করতে হবে ভবিষ্যতের জন্য। পুরো বিশ্বের মানুষ প্রত্যাশা করছে শান্তি, মর্যাদা আর সমৃদ্ধির। জলবায়ু সংকট, অসমতা, ক্রমবর্ধমান সংকট সমাধানের আহ্বান জানাচ্ছে তারা। জাতিসংঘ আছেই এসব চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে। এই ভবিষ্যৎ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে যেন আন্তর্জাতিক সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান করতে পারি। সবাইকে অভিনন্দন জানাই আমাদের সঙ্গে কাজ করার জন্য ।’

জাতিসংঘে বিনা ভোটে গৃহীত চুক্তি প্যাক্ট ফর দ্য ফিউচারে রয়েছে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা, সুশাসন নিশ্চিত, স্থিতিশীল উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন রোধ, মানবাধিকার রক্ষা আর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কল্যাণ।

যদিও কোনো সংস্থা একচ্ছত্র আধিপত্য দেখিয়ে স্বাধীন দেশের ওপর চুক্তি চাপিয়ে দিতে পারে না উল্লেখ করে এতে অংশগ্রহণ না করার কথা জানিয়েছে আর্জেন্টিনা। চুক্তির বিরোধিতা করেছে রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া, ইরান, নিকারাগুয়া ও সিরিয়া।

এসময় যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোর জন্য বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানায় সুদান। মেক্সিকোর চ্যান্সেলর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো দেয়ার ক্ষমতাই তুলে দিতে বলেন।

ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধে জাতিসংঘের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে কিউবা। অন্যদিকে, গাজায় সেনা অভিযান অব্যাহত থাকলেও ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত বলেন, শান্তিপূর্ণ দেশ ইসরাইল। বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর হুমকিতে রয়েছে দেশের সাধারণ মানুষ।

ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা এই চুক্তির সঙ্গে আছি। কিন্তু সবসময় ঝুঁকির মধ্যে আছি কারণ সশস্ত্র বিভিন্ন গোষ্ঠী আমাদের হুমকি দিয়েই যাচ্ছে। দেশের সাধারণ মানুষই নিরাপত্তাহীনতায় আছে। অথচ আমরা শান্তিপূর্ণ জাতি । আমরা যুদ্ধ চাই না। কিন্তু দেশের মানুষের ওপর হামলা হলে চুপ থাকবো না। চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে ওঠা এতো সহজ নয়। ইসরাইল ভাঙার চেয়ে গড়ায় বিশ্বাসী।’

এদিকে বিবর্তনের এমন সময় বিশ্বের সংকটগুলো নিয়ে একযোগে কাজ করতে সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তিনি বলেন, ‘আমরা বৈশ্বিক বিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। স্থিতিশীলতা নেই, আন্তর্জাতিক নীতির ভীত নড়ে গেছে। এরমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন, অসমতা, আদিবাসী অধিকারের অভাব বিশ্বকে আরও অনিরাপদ করছে। বহুপাক্ষিকতা কতটুকু কাজ করবে জানি না। কিন্তু বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করে হবে।’

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন শুরুর আগে দুই দিনের এই সম্মেলনে অংশ নিয়ে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজ বলেন, ‘জাতিসংঘের সদস্য নয় যে দেশগুলো, তাদের জন্য ভবিষ্যৎ চুক্তি অনুসরণ করা বেশ কঠিন।’

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বলেন, ‘বিশ্বে নিরাপত্তা এখন শুধু কয়েকটি দেশেই সীমাবদ্ধ। পুনর্গঠন হতে হবে পুরো বিশ্বের।’ সম্মেলনে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ, আর এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক আইন নিয়ে পদক্ষেপের আহ্বান জানান জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। এসময় জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কঠোর পদক্ষেপের অআহ্বান জানান ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভা।

ইউক্রেন, গাজা, সুদান ইস্যুসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলমান সংঘাত আর আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থার পুনর্গঠন, জলবায়ু পরিবর্তন, জাতীয় ঋণ ইস্যুতে জাতিসংঘের সংস্কার পদক্ষেপ জরুরি বলে মনে করেন বিশ্ব নেতারা।