জাতিগত সংঘাতে টালমাটাল ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুর। রাজধানী ইম্ফল ও কংপোকপি শহরে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা কেন্দ্র করে আবারও উত্তপ্ত রাজ্যটি। মূলত হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত অঞ্চলে হামলাগুলো চালানো হয়। রাজ্যের সরকারের দাবি এসব হামলার পেছনে কুকি জনগোষ্ঠী দায়ী। গত দেড় বছর ধরে নিজেদের অধিকার রক্ষায় এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে লড়াই চলছে।
রাজ্যের জিরিবাম জেলায় নতুন করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। কুকি বিদ্রোহীরা মেইতেই সম্প্রদায়ের একজনকে ঘুমন্ত অবস্থায় গুলি করে হত্যা করে। এর জেরে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বন্দুক যুদ্ধে প্রাণ হারান বেশ কয়েকজন। চলতি মাসেই সংঘাতে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৮ জনের। এছাড়া, গেল শুক্রবার মণিপুরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতেও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়।
এদিকে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এবং বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় আতঙ্কে আছেন বাসিন্দারা। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছে না। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ড্রোন বিধ্বংসী অ্যান্টিড্রোন ব্যবস্থা মোতায়েন করেছে পুলিশ। কয়েকদিনের হামলায় ঘুম নষ্ট হয়ে গেছে রাজ্যের নিরাপত্তা বাহিনীর। এরইমধ্যে মণিপুর রাইফেলসের দুটি অস্ত্রাগারও লুটের চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা।
গত কয়েকদিনের ঘটনায় রাজ্য পুলিশ অন্য বাহিনীর সহায়তায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব ধরনের চেষ্টা করে যাচ্ছে। এখানকার পরিস্থিতি খুব নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করছে সবাই। পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মোতায়েন করা হয়েছে। সংঘাতপূর্ণ এলাকায় বিশেষ নজর রাখছে নিরাপত্তা বাহিনী।
জঙ্গি দমনে চিরুনি অভিযানে নেমেছে মণিপুর পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী। বেশ কয়েকটি জঙ্গি আস্তানা গুড়িয়ে দিয়েছে তারা। তবে কুকি জনগোষ্ঠীর অভিযোগ, পুলিশ ও সমতল অঞ্চলের মেইতেই বাসিন্দারা একসঙ্গে মিলে পাহাড়ি অঞ্চল দখলের চেষ্টা করছে।
রাজ্যের এমন পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং। মণিপুরের শাসকদলের বিধায়কদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর কেন্দ্র সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়ে ৮ দফা দাবির কথা তুলে ধরেন মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কুকি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে পূর্ণ মাত্রায় অভিযান শুরুর অনুমতি চেয়েছেন তারা।
২০২৩ সালে মণিপুর হাইকোর্ট মেইতেই জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারি চাকরিসহ অর্থনৈতিক সুবিধা দেয়ার আদেশ দেয়। এর পরই অন্য গোষ্ঠীগুলো তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নামে। এতে প্রাণ হারান কয়েকশ মানুষ। ঘর ছাড়া হয়েছেন আরও প্রায় ৬০ হাজার বাসিন্দা। পরবর্তীতে বিতর্কিত এই নির্দেশ প্রত্যাহার করলেও শান্তি ফেরেনি সেভেন সিস্টার্সের রাজ্য মণিপুরে।