বিদেশে এখন
0

মার্কিন নির্বাচনে গুরুত্ব পাচ্ছে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের ইস্যু

আসন্ন মার্কিন নির্বাচনে গুরুত্ব পাচ্ছে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের ইস্যু। সেনা প্রত্যাহারের শেষ দিন কাবুল বিমানবন্দরে যে ২শ' মানুষের প্রাণহানি হয়, তার দায় বাইডেন প্রশাসনকেই নিতে হবে এমন দাবি করেছে ট্রাম্প শিবির। এছাড়া, ২০২১ ও ২০২২ সালে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে আসা দুই লাখ শরণার্থীর অনেকেই এখন মার্কিন ভোটার। আগামী নির্বাচনে আফগান আমেরিকানদের এই ভোট ব্যাংক কতখানি প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে- এ নিয়েও শুরু হয়েছে নানা আলোচনা।

২০২০ সালে আফগানিস্তান থেকে ১৪ মাসের মধ্যে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করতে তালেবান সরকারের সাথে বিতর্কিত চুক্তি করেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর কয়েকমাস পরে ট্রাম্পকে হারিয়ে ক্ষমতায় বসেন বাইডেন। কিন্তু ট্রাম্পের এই চুক্তি বাস্তবায়নে তেমন কোনো প্রস্তুতি ছিল না হোয়াইট হাউজের।

২০২১ সালের আগস্টে আবারও কাবুলের মসনদে জাঁকিয়ে বসে তালেবান সরকার। সেনা প্রত্যাহার শুরু করে বাইডেন প্রশাসন। ৩০ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের শেষ বিমানটি যখন কাবুল বিমান বন্দর ছেড়ে যাচ্ছিলো তখন এক বোমা হামলায় ১৩ জন মার্কিন সেনাসহ ১৭০ জন আফগান নিহত হয়। এই হামলার পেছেনে বাইডেন প্রশাসনের উদাসীনতা ও পরিকল্পনার অভাবকে দায়ী করে মার্কিন তদন্তকারী দল। তালেবানদের স্বার্থকে প্রধান্য দেয়ায় ট্রাম্পের দিকেও আঙুল তোলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

ইন্টারন্যাশনাল ডেটা প্রতিবেদন অব মাইগ্রেশনের বলছে, তালেবান সরকারের উত্থানের পর ২০২১ এর আগস্ট থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আফনানিস্তান ছেড়ে আসা শরণার্থীর সংখ্যা অন্তত ৩৬ লাখ। এদের মধ্যে প্রায় ৪ লাখ গেছেন ইউরোপে। দুই লাখের কাছাকাছি আফগান আশ্রয় নেন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায়। যাদের অনেকেই মার্কিন নাগরিকত্ব পেয়েছেন। আগামী নির্বাচনের তারাও অংশ নেবেন ভোটে।

২০২২ এর নভেম্বরে নর্দান ভার্জিনিয়ায় মধ্যবর্তী নির্বাচনের সময় আফগান আমেরিকান ভোটারদের নিয়ে একটি গবেষণাধর্মী প্রতিবেদন করে ভয়েস অব আমেরিকা। দেখা যায়, আফগানিস্তান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি ও আফগান শরণার্থীদের নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন আফগান ভোটাররা।

আফগান ভোটারদের একজন বলেন, ‘আফগানিস্তানের ব্যাপারে যাদের দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক তাদেরকে ভোট দেব। দেশে যে আফগানরা মানবেতর জীবনযাপন করছে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।’

আরেকজন বলেন, ‘কংগ্রেসের উচিত 'ত্রিপল এ' বিল পাশ করা। এতে করে যারা সম্প্রতি মার্কিন মুলুকে এসেছেন তাদের বৈধ কাগজপত্র নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না।’

আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আলোচনায় 'আফগানিস্তান অ্যাডজাস্টমেন্ট অ্যাক্ট' বা 'ট্রিপল এ বিল'। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে আটকে থাকা এই বিল পাশ হলে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে আসা আফগান শরণার্থীরা স্থায়ীভাবে সেখানে বসবাসের নিশ্চয়তা পাবে। বর্ষীয়ান ডেমোক্র্যাট সিনেটেররা মনে করেন, মানবিক কারণে যারা সাময়িকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের অনুমতি পেয়েছেন, তাদের জন্যও বিলটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।

সিনেটর জিন শাহীন বলেন, ‘আমরা চাইলে, যারা সেনা প্রত্যাহারের সময় যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন এবং এখনও আসার চেষ্টা করছেন তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে পারি। বিশেষ করে যারা যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে কাজ করেছেন এবং যাদের আর কোনোভাবে দেশে ফেরার সুযোগ নেই।’

কাবুল বিমান বন্দরের ঘটনায় বাইডেন-ট্রাম্প উভয়েই সমালোচিত। ফলে, আগামী নির্বাচনে আফগান শরণার্থীদের স্বার্থ রক্ষায় রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান ও পরিকল্পনার ওপরই মূলত নির্ভর করছে আফগান আমেরিকান ভোটারদের সমর্থন। বিশেষ করে ক্যালিফোর্নিয়ার মতো অঙ্গরাজ্য যেখানে সবচেয়ে বেশি আফগান ভোটারদের বসবাস সেখানে শরণার্থী ইস্যু উপেক্ষা করার সুযোগ নেই।

যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত প্রায় সাড়ে চার কোটি শরণার্থীর ০.৪ শতাংশ আফগানিস্তানের। এই ১ লাখ ৯৫ হাজার আফগান শরণার্থীর ভাগ্য এখন অনেকাংশেই নির্ভর করেছে মার্কিন নাগরিকত্ব পাওয়ার ওপর। তাই, আফগান আমেরিকানদের ভোট ব্যাংক আদায় করতে হলে শরণার্থীদের কাজের অনুমতি ও স্থায়ীভাবে বসবাসের প্রক্রিয়া নিয়ে ভাবতে হবে ট্রাম্প ও কামালাকে।

tech