বিদেশে এখন
0

হামাসের অনুপস্থিতিতে তিন দেশের মধ্যস্থতায় গাজার যুদ্ধবিরতি আলোচনা

অবশেষে হামাসের অনুপস্থিতিতেই কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় শুরু হয়েছে গাজার যুদ্ধবিরতির আলোচনা। বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিন দেশের প্রতিনিধিরা। শুক্রবার (১৬ আগস্ট) আবারও এ বিষয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো আলোচনার কথা রয়েছে। দীর্ঘ দশ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এ সংঘাতে ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৪০ হাজার।

গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিসের বাসিন্দা নাজি আবু হাতেব। গাজায় ইসরাইলি অভিযান শুরুর পর থেকেই হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের জন্য কবর খোঁড়ার কাজ করছেন তিনি। গেল প্রায় ১১ মাসে কী পরিমাণ ফিলিস্তিনির জন্য নিজ হাতে কবর খুঁড়েছেন তিনি, সেই সংখ্যা হয়তো নিজেও জানেন না হাতেব। তবে, অভিযান শুরুর প্রায় এক বছরের মাথায় এসে এই ব্যক্তি জানান, কবর খোঁড়ার জন্য আর কোনো জায়গা অবশিষ্ট নেই এই খান ইউনিসে।

স্থানীয় একজন বলেন, 'যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই আমরা এক মিনিটের জন্য থামিনি। একটার পর একটা কবর খুঁড়েছি আর নিজ হাতে শহীদদের কবর দিয়েছি। প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০টি, কখনও কখনও আবারও একদিনে ৭০টিও কবর খুঁড়েছি আমরা। পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, একটা কবরের ওপর আরেকটা কবর দিতে হচ্ছে। পুরো এলাকায় কবর খোঁড়ার মতো আর কোনো জায়গা অবশিষ্ট নেই। তাই বাধ্য হয়েই পুরোনো কবরগুলো খুঁড়ে সেখানে নতুন করে কবর দিচ্ছি আমরা।'

এই যখন অবস্থা তখন, গাজায় ইসরাইলি হামলায় ফিলিস্তিনি নিহতদের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৪০ হাজার। গেল কিছুদিন ধরে দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিসে আইডিএফের তাণ্ডবের পর বৃহস্পতিবার হামলা চালানো হয় উত্তরাঞ্চলীয় জাবালিয়া শরণার্থী শিবির এলাকায়। সেখানে বিভিন্ন আবাসিক এলাকা ও অ্যাপার্টমেন্ট লক্ষ্য করে চালানো বিমান হামলায় নারী ও শিশুসহ বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনির নিহতের খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন আরও অনেকে।

এরমধ্যেই, ইসরাইলি বাহিনীর নৃশংস বর্বরতার শিকার গাজার উত্তর, দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলীয় এলাকাগুলো পরিদর্শনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। শিগগিরই ফিলিস্তিনি প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে তিনি সেখানে পরিদর্শনে যাবেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যম।

অন্যদিকে, আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, গেল মাসেই তিনি ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুকে গাজায় যুদ্ধ বন্ধের অনুরোধ করেছেন। তবে, তার সঙ্গে সাম্প্রতিক ফোনালাপের বিষয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে যেসব খবর প্রকাশ হয়েছে তা অস্বীকার করেন তিনি।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, 'আমি তাকে যতদ্রুত সম্ভব যুদ্ধ শেষ করার কথা বলেছি। এই যুদ্ধ অবশ্যই দ্রুত শেষ করতে হবে। যদি তারা এ যুদ্ধে জয়ী হতে চায়, তবে দ্রুত তা নিশ্চিত করে যুদ্ধের সমাপ্তি টানতে হবে। কিন্তু এটা শেষ হতেই হবে, মানুষ হত্যা দ্রুত বন্ধ করতে হবে।'

এদিকে, দীর্ঘ বিরতির পর শেষ পর্যন্ত হামাস প্রতিনিধিদের অনুপস্থিতিতেই কাতারের রাজধানী দোহায় শুরু হয়েছে গাজার যুদ্ধবিরতির আলোচনা। বৃহস্পতিবার কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে গাজায় যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে বলে তিন দেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়। শুক্রবার, দ্বিতীয় দিনের মতো এ আলোচনা চলবে বলে জানা গেছে। একইসঙ্গে, যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে শিগগিরই একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব বলেও আশা প্রকাশ করেন মধ্যস্থতাকারীরা।

tech