বিদেশে এখন
0

কাজিরাঙ্গা পার্কে বন্যার পানিতে মৃত্যু দেড় শতাধিক বন্যপ্রাণীর

ভারি বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যায় বিপর্যস্ত ভারতের উত্তরাঞ্চল। প্রকৃতির এই নির্মমতা থেকে রেহাই পায়নি নিরীহ পশুপাখি। আসামের কাজিরাঙ্গা ন্যাশনাল পার্কে বন্যার পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে দেড় শতাধিক বন্যপ্রাণীর। এরমধ্যে বিরল প্রজাতির এক শিং-ওয়ালা ১০টি গন্ডারও ভেসে গেছে বানের জলে।

ছোট ছোট লাইফ বোটে ভেসে বেড়াচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা। তবে মানুষ নয়, পানিতে আটকে পড়া বন্যপ্রাণী উদ্ধারে চলছে অভিযান। ভারতের উত্তরপূর্বে আসামের রাজ্যের কাজিরাঙ্গা ন্যাশনাল পার্কের দৃশ্য এটি।

গেল দুই মাস ধরে ভারি বৃষ্টি ও আকস্মিক বন্যার কবলে আসাম। পানিতে তলিয়ে গেছে কাজিরাঙ্গা ন্যাশনাল পার্কের প্রায় এক তৃতীয়াংশ। গেল দুই মাসে বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে এই পার্কের অন্তত ১৭৪টি বন্যপ্রাণী। তালিকায় রয়েছে এক শিংওয়ালা ১০টি গন্ডারও। পানিতে আটকা পড়া প্রাণী উদ্ধারে অব্যাহত আছে অভিযান।

উদ্ধারকর্মীদের একজন বলেন, '১৫৩টি প্রাণী উদ্ধার করা হয়েছে। পানিতে ডুবে যাওয়া ছাড়া নানা কারণে মৃত্যু হয়েছে ১৫৯টি প্রাণীর। দু'টি সড়ক দুর্ঘটনায় বেশ কিছু প্রাণী নিহত হয়।'

পার্কটির মাঠ পরিদর্শক দলের প্রধান সোনালি ঘোষ জানান, বিশ্বের এক শিংওয়ালা যত গন্ডার আছে তার অর্ধেকই কাজিরাঙ্গা ন্যাশনাল পার্কের অভয়ারণ্যে বাস করে। অর্থাৎ বিশ্বের প্রায় ৪ হাজার গন্ডারের মধ্যে আড়াই হাজারেরও বেশি গন্ডারের বসবাস এখানে। বিলুপ্ত এই প্রাণীর আকস্মিক মৃত্যুতে উদ্বেগ জানায় পরিদর্শক দল। জানায়, বৈরী আবহাওয়ার কবলে আটকে পড়া প্রাণীদের উদ্ধারের পর স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে পার্কে ফেরত আনা হচ্ছে।

উদ্ধারকর্মীদের আরেকজন বলেন, 'সকালে সেন্টার ফর ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন পরিদর্শনে গিয়ে দেখি উদ্ধারকৃত ৮৬টি প্রাণী সেখানে ভর্তি। স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার পর ৫৮টি প্রাণী অভয়ারণ্যে ফেরত পাঠানো হয়েছে।'

কাজিরাঙ্গা ন্যাশনাল পার্কের আয়তন ১ হাজার ৯০ বর্গ কিলোমিটার। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ খ্যাত এই পার্কে ২০১৭ সালে সর্বোচ্চ ২৯১টি প্রাণীর মৃত্যু হয়। এরমধ্যে একটি শিংওয়ালা গন্ডারের সংখ্যা ২৪। এর আগে ২০১৮, ২০২১, ২০২২ ও সবশেষ ২০২৩ সালে বন্যার কবলে পড়লেও এই বিপুল সংখ্যক প্রাণীর মৃত্যুর ঘটনা এই প্রথম।

যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে অরক্ষিত অবস্থায় থাকে বন্যপ্রাণী। ভূমিকম্প, ভূমিধস, বন্যা, ঝড়সহ নানা কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এসব প্রাণীর আবাসস্থল। আহত অবস্থায় আশ্রয়ের খোঁজে লোকালয়ে এলে প্রাণ যায় মানুষের হাতে। বন্যপ্রাণীর সুরক্ষা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা না করলে আরও অনেক বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী অকালে হারিয়ে যাবে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা।

ইএ