অনেকেই ভেবেছিলেন বোয়িংয়ের পরিস্থিতি এতোটাই খারাপ যে, ২০২৪ সালে নতুন করে আর নেতিবাচক কিছু হবে না। কিন্তু সেই ধারণাও ভুল প্রমাণিত হলো। সোমবার মধ্যরাতে বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার যাত্রার মাঝামাঝি সময়ে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে নিচের দিকে নামতে থাকে, বৈমানিক এই উড়োজাহাজের নিয়ন্ত্রণ কিছু সময়ের জন্য হারিয়ে ফেলেন।
লাতাম এয়াররলাইন্সের ফ্লাইটটি অস্ট্রেলিয়া থেকে নিউজিল্যান্ড যাচ্ছিলো। সেসময় আহত হন অনেকেই। যাত্রীরা বিমানের ওপরের অংশের সঙ্গে ধাক্কা লেগে আহত হন, অনেকে আবার শূন্যে ভাসতে থাকেন। আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন যাত্রীরা।
এক যাত্রী বলেন, 'কোথাও কোন সমস্যা ছিল না, হঠাৎ ঝাঁকুনি লাগলো। আমরা কেউ প্রস্তুত ছিলাম না। আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। ভয়াবহতা বুঝতে পারিনি।'
উড়োজাহাজটিতে ২৬৩ জন যাত্রী আর ৯ জন কেবিন ক্রু ছিলেন। বৈমানিক বলছেন, ইনস্ট্রুমেন্ট প্যানেল কিছু সময়ের জন্য কালো হয়ে যায়। সেসময় উড়োজাহাজটি নিচের দিকে নেমে যায়। যদিও তদন্তকারীরা বলছেন, অনেকগুলো ত্রুটি একসঙ্গে দেখা দিলেই এই ধরনের বিপজ্জনক ঘটনা ঘটতে পারে। শক্তিশালী এই ঝাঁকুনিতে আহত কয়েকজনকে হাসপাতাল পর্যন্ত যেতে হয়েছে। যদিও বিমানটি নিরাপদে অবতরণ করানো হয়। এই ঘটনায় বোয়িংয়ের শেয়ারের দর ৩ শতাংশ পর্যন্ত নেমে যায়।
এরমধ্যে যে সপ্তাহে বোয়িংয়ের নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদন হচ্ছে, সেসময় প্রতিষ্ঠানটির সাবেক কর্মকর্তা জন বারনেটের মৃতদেহ পাওয়া যায়। বোয়িংয়ের উড়োজাহাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর আলোচনায় আসেন তিনি। বোয়িংয়ে ৩২ বছর কর্মরত ছিলেন তিনি।
মৃত্যুর কয়েকদিন আগে বোয়িংয়ের বিপক্ষে করা মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছিলেন বারনেট। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রাংশের কারণে বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার যেকোন সময় অক্সিজেনশূন্য হয়ে যেতে পারে। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে বোয়িং।
এর আগে চলতি বছরের শুরুতেই বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্সের আলাস্কা এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজের মাঝ আকাশে দরজা উড়ে যাওয়ার ঘটনায় তোপের মুখে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে, দরজায় ত্রুটির কারণে ঘটে এই দুর্ঘটনা। এরপর ৭৩৭ ম্যক্সের অনেক উড়োজাহাজ উড্ডয়ন, উৎপাদন আর সরবরাহ স্থগিত করা হয়।
এছাড়াও মার্চেই ৭৩৭ ম্যাক্সের একটি ইঞ্জিনে আগুন ধরায় জরুরি অবতরণ করানো হয় টেক্সাসে। কেবিনে ধোয়া দেখা দেয়ায় ৭৩৭-৮০০ মডেলের আরেকটি উড়োজাহাজ পোর্টল্যান্ডে জরুরি অবতরণ করানো হয়। এরপর বোয়িং ৭৭৭-২০০ মডেলের একটি উড়োজাহাজ স্যান ফ্রান্সিস্কো থেকে উড্ডয়নের পরপরই চাকা পড়ে গিয়ে গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেটিও জরুরি অবতরণ করানো হয়। সমসাময়িক এসব দুর্ঘটনায় চরম ভাবমূর্তি সংকটে পড়ে গেছে বোয়িং।
ইউরোপের এয়ারবাসের সঙ্গে টেক্কা দিয়ে বিশ্বের উড়োজাহাজের বাজারে একচ্ছত্র আধিপত্য মার্কিন প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের। ২০১৮ আর ২০১৯ সালে ইন্দোনেশিয়া আর ইথিওপিয়ায় ভয়াবহ দুই দুর্ঘটনায় কয়েকশ' মানুষের প্রাণহানির পর থেকে বিশ্বব্যাপী চাপের মুখে পড়েছে বোয়িং।
২০২৪ সালের শুরু থেকেই শেয়ারবাজারে নেতিবাচক অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটি। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্য অনুযায়ী, বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্সের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিরীক্ষায় অকার্যকর হয়েছে বোয়িং।